নদী থেকে বালু উত্তোলন, ভাঙনের মুখে বাঁধসহ ঘর-বাড়ি


প্রকাশিত: ০২:৩৮ পিএম, ০৫ জুন ২০১৭

গাইবান্ধা সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নের পুরান লক্ষ্মীপুর গ্রামে ঘাঘট নদী থেকে শ্যালোচালিত একটি মেশিন দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে কুপতলা ইউনিয়নের পশ্চিম কুপতলা গ্রাম থেকে সাদুল্লাপুর উপজেলা শহরে যাতায়াতের রাস্তা (বাঁধ) ও আশেপাশের শতাধিক পরিবারের ঘর-বাড়ি।

ওই বাঁধটি নদীগর্ভে বিলীন হলে আসন্ন বর্ষাকালে এই ইউনিয়নসহ আশেপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হবেন। তাই বালু উত্তোলন বন্ধ করে অতিদ্রুত এই বাঁধটি রক্ষা করা প্রয়োজন।

সোমবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পুরান লক্ষ্মীপুর গ্রামের মোস্তফা মিয়া ও রফিকুল ইসলাম ঘাঘট নদী থেকে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত মেশিন দিয়ে নদী থেকে বালু তুলছেন। সেখানেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙন শুরু হয়েছে। এখানকার কয়েকটি পরিবার ঘর-বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।

বাঁধে ভাঙন শুরু হওয়ায় সরিয়ে ফেলা বাড়ির জায়গা দিয়ে মানুষ কষ্ট করে চলাচল করছে। সেখান দিয়ে সাইকেল ও মোটরসাইকেল ছাড়া কোনো রিকসা-ভ্যান চলাচল করতে পারছে না। অন্য পথ দিয়ে বেশি এলাকা ঘুরে মানুষকে গন্তব্যে পৌঁছতে হচ্ছে। এখান থেকে সাদুল্লাপুর উপজেলা শহরের দূরত্ব প্রায় ৩ কিলোমিটার। প্রতিদিন এই পথ দিয়ে অসংখ্য মানুষ চলাচল করে।

পুরান লক্ষ্মীপুর এলাকার নদীর এই বাঁধটি দিয়ে হিয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ সাদুল্লাপুর উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার দেড়শতাধিক ছাত্রছাত্রী চলাচল করে।

Gaibandha

পশ্চিম কুপতলা গ্রামের সাদুল্লাপুর ডিগ্রি কলেজের ছাত্র মনির মিয়া বলেন, আমার বাড়ি থেকে কলেজের দূরত্ব অল্প। পুরান লক্ষ্মীপুর এলাকায় নদী থেকে বালু উত্তোলন করায় ভাঙন বেড়ে গেছে। বাঁধটি ভেঙে গেলে চলাচলে ভোগান্তি পেতে হবে।

ওই পথ দিয়ে চলাচলকারী সাদুল্লাপুর উপজেলা শহর এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল মোত্তালেব বলেন, প্রতিদিন এই সড়কটি দিয়ে চলাচল করতে হয়। নদীতে ভাঙন শুরু হওয়ায় নদীর বাঁধটি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সাদুল্লাপুর উপজেলা শহরে যাওয়ার এটিই সংক্ষিপ্ত রাস্তা। আর কয়েকদিন পরেই অন্যপথে বেশি এলাকা ঘুরে চলাচল করতে হবে। ফলে সময় বেশি লাগায় ক্ষতিগ্রস্ত হবো।

পুরান লক্ষ্মীপুর গ্রামের জাহিদুল ইসলাম ও ময়নুল ইসলাম বলেন, গত দুইদিন আগে নদী থেকে বালু তোলার জন্য মেশিন বসানো হয়েছে। ঠিক সেই স্থানেই শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। বাঁধটি ভেঙে গেলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে। জনজীবনে নেমে আসবে দুর্ভোগ, ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হবে।

নদী থেকে বালু উত্তোলনকারী মোস্তফা মিয়া ও রফিকুল ইসলাম বলেন, নদীগর্ভে আমাদের ঘর-বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। একটা নিচু স্থানে ঘর সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সেই জায়গাটা উঁচু করার জন্য নদী থেকে বালু তুলছি।

কামারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাসমুল আলম মুঠোফোনে জাগো নিউজকে বলেন, বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমার জানা নাই। আমি ওই এলাকার ইউপি সদস্যকে বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা নিতে বলবো। নদী ভাঙনরোধে স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হয়েছে।

সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রহিমা খাতুন বিকেল সাড়ে তিনটায় মুঠোফোনে জাগো নিউজকে বলেন, নদী ভাঙন ও বালু উত্তোলনের বিষয়ে আমার জানা নেই। কেউ লিখিত অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রওশন আলম পাপুল/এমএএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।