রাজশাহী চেম্বারের অনিয়ম নিয়ে দুদকে অভিযোগ


প্রকাশিত: ১০:২৪ এএম, ০৫ জুন ২০১৭

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যাপক আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি রাজশাহীর সাধারণ ব্যবসায়ীরা এনিয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনে।

তারা অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। পরে দুদক থেকেও অভিযোগের প্রাথমিক অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগে বলা হয়েছে, রাজশাহী চেম্বার ভবনটিতে সাম্প্রতিক সময়ে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হয়েছে যা কোনো দরপত্র বা টেন্ডার আহ্বান ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। চেম্বারের পরিচালক ও হাউজ কমিটির সভাপতি রিংকু ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজ করেন নিজস্ব লোকজন দিয়ে যা গুরুতর অনিয়ম ও দুর্নীতির পর্যায়ে পড়ে। এক্ষেত্রে লাখ লাখ টাকার অনিয়ম হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন। এছাড়া ভবনের পুরানো মালামাল অব্যবহার্য দেখিয়ে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে বিপুল টাকা আত্মসাতেরও অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়া চেম্বার ভবনে কোনো প্রকার দরপত্র ছাড়াই স্পেস বরাদ্দ দিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করা হয়েছে।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে রাজশাহী চেম্বারের সহকারী সচিব সাইদুল ইসলাম ও হিসাবরক্ষক সাখাওয়াৎ হোসেনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে যাতে চেম্বারে সংঘটিত অনিয়ম দুর্নীতির ঘটনা প্রকাশ না হয়ে পড়ে। দুই কর্মচারীকে চাকরিচ্যুতির বিষয়টি তদন্ত করলে রাজশাহী চেম্বারের দুর্নীতির বিশাল চিত্র প্রকাশ পাবে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কাজের জন্য রাজশাহী চেম্বারের পরিচালকদের জন্য বিভিন্ন খাদ্য পণ্য আসল দামের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে কেনার মাধ্যমে ব্যাপক দুর্নীতি করা হয়েছে ও হচ্ছে। এ খাতে বছরে কয়েক লাখ টাকা করে আত্মসাৎ করেছেন সভাপতি ও তার সহযোগী একজন পরিচালক।

রাজশাহী চেম্বারের জন্য লিফট কেনা বাবদ স্থানীয় সংসদ সদস্যের বরাদ্দ তহবিলের বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। লিফট কেনায় দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে অভিযোগে।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ মতে, ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় গত কয়েক বছর ধরে রাজশাহী চেম্বার দখলে রেখে ব্যবসায়ীদের স্বার্থকে পদদলিত করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে চলেছেন বিএনপি সমর্থিত ব্যবসায়ীদের একটি অংশ। তারাই কেউ সভাপতি কেউবা পরিচালক হয়ে শাসন করছেন রাজশাহী চেম্বার।

বিশেষ করে রাজশাহী চেম্বারের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি এবং চেম্বারের হাউজ কমিটির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বিএনপির ঘোর সমর্থক ব্যবসায়ী বলে জানা গেছে। তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ক্ষমতাসীন নেতাদের হাত করে চেম্বার দখলে রেখে নিজেদের ব্যবসায়ীক স্বার্থ হাসিলে তৎপর রয়েছেন বলে অভিযোগে দাবি করা হয়েছে।

রাজশাহীর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে রাজশাহী চেম্বারে নিয়মতান্ত্রিকভাবে কোনো নির্বাচন হয়না। ভোটের আগে ক্ষমতাসীন নেতারা পদগুলো ভাগ করে নিয়ে চেম্বারে পদ পেতে আগ্রহী ব্যবসায়ীদের কাছে মোটা টাকায় বিক্রি করে আসছেন। এ নিয়ে সরকার সমর্থক ব্যবসায়ীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ থাকলেও এই কাজটি নেতারা করেছেন গত দুই টার্মে।

অভিযোগ রয়েছে, গত দুই টার্মে আগ্রহী কোনো ব্যবসায়ীকে চেম্বারের মনোনয়নপত্র উত্তোলন করতে দেয়া হয়নি। কেউ মনোনয়নপত্র উত্তোলনের জন্য গেলে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতারা তাদের পেছনে ক্যাডার লেলিয়ে দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। ফলে সাধারণ ব্যবসায়ীরা তাদের পছন্দমতো কোনো নেতা নির্বাচন করতে পারেননি। গত দুই টার্মে রাজশাহী চেম্বারের সভাপতিসহ অধিকাংশ পরিচালক পদগুলো বিএনপি সমর্থক ব্যবসায়ীরা, ক্ষমতাসীন নেতাদের বিভিন্ন উপায়ে ম্যানেজের মাধ্যমে দখলে নিয়ে রাজত্ব করছেন বলে জানা গেছে।

রাজশাহী চেম্বারের এমন কয়েকজনকে পরিচালক করা হয়েছে যারা বিভিন্ন ব্যাংকের অর্থ লোপাটের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এতে রাজশাহী চেম্বারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এসব পরিচালকের সহায়তায় রাজশাহী চেম্বার বাণিজ্য মেলার নামে জুয়া-হাউজি-লটারির আয়োজন করে চেম্বারের চরিত্রকে কালিমালিপ্ত করেছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, রাজশাহী চেম্বার এখন ব্যবসায়ীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের চরিত্র হারিয়েছে। এখানে ক্ষমতাসীন নেতাদের আর্শিবাদ নিয়ে বিএনপির ব্যবসায়ীরা তাদের স্বার্থ হাসিলের কাজ করছে। তারা অভিযোগে আরও বলেন, গত বছর ঢাকার একজন বড় ব্যবসায়ীকে রাজশাহী চেম্বারের সদস্য পদ দেন বিপুল টাকার বিনিময়ে। এ নিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, ২০০৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত রাজশাহী চেম্বারে ২৮ কোটি টাকার অনিয়ম দুর্নীতি সংঘটিত হয়েছিল। সরকারের নির্দেশে একটি কমিটি দুর্নীতির এ চিত্র উদঘাটন করেন। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হলেও আজো কারো বিরুদ্ধেই কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী চেম্বারের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি স্বীকার করেন, চেম্বার ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রাসারণ টেন্ডার ছাড়াই করা হয়েছে। তবে সেখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি বলে দাবি করেন মনি। ৪০ লাখ টাকায় লিফট কেনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানেও দুর্নীতি হয়নি।

নির্বাচন না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা নির্বাচন এড়িয়ে মনোনয়নের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে চেম্বারের কমিটি করে আসছে। ফলে রাজশাহী চেম্বার সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে। যারা দুর্নীতিবাজ তারাই এই ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।

এমএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।