কাজের খোঁজে স্কুল ছাড়ছে হাওরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা


প্রকাশিত: ০৫:২১ এএম, ০৩ জুন ২০১৭

আগাম বন্যায় ফসলের ক্ষতির প্রভাব পড়েছে নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। অভাবের তাড়নায় শিক্ষার্থীরা চলে যাচ্ছে পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন এলাকার কর্মক্ষেত্রে। খালি হতে শুরু করেছে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রশংসাপত্রের জন্য ভিড় বাড়ছে প্রতিষ্ঠানসহ জনপ্রতিনিধিদের কার্যালয়েও।

এভাবে চলতে থাকলে হুমকিতে পড়বে হাওরাঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থা। আর এ আশংকা প্রতিষ্ঠানের খোদ শিক্ষকসহ জন প্রতিনিধিদেরও। শিক্ষার পরিবেশ ধরে রাখতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থার দাবি সচেতন মহলের।

খালিয়াজুড়ির সিদ্দিকুর রহমান বালিকা বিদ্যানিকেতনের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ও কৃষ্ণপুর গ্রামের দিপালী রানী বর্মণের মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সূচনা বর্মণ অভাবের তাড়নায় তিন বোনসহ স্কুল ছেড়ে চাকরি নিয়েছে গাজীপুরের একটি গার্মেন্টসে। তার মতো এই স্কুলের অন্তত ৩০-৪০ ভাগ শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে অভাবের তাড়নায় কোনো পথ না দেখে স্কুল ছেড়েছে। স্কুলের ২৩০ শিক্ষার্থীর মধ্যে বর্তমানে আছে মাত্র ৮০ জন।

নিজের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা বলতে গিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি এই শিক্ষার্থী। পড়াশুনা তো দূরের কথা সামনের দিনগুলি নিয়ে আশংকার কথা জাগো নিউজকে জানান কৃষ্ণপুর গ্রামের সূচনার মা দিপালী রাণী বর্মণ।

বিদ্যালয় ছেড়ে যেতে প্রশংসাপত্রের জন্য ভিড় বাড়ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ জনপ্রতিনিধিদের কার্যালয়েও। বিষয়টি স্থানীয়দের বোঝাতে ব্যর্থ হচ্ছেন তারা। তাই তারা জরুরি ভিত্তিতে সরকারি সহযোগিতা দাবি করেছেন খালিয়াজুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মো. ছানোয়ারুজ্জামন যোসেফ।

খালিয়াজুড়ি সদরের সিদ্দিকুর রহমান বালিকা বিদ্যা নিকেতনের প্রধান শিক্ষক দিপংকর দত্ত রায় জানান, ছাত্রীরা বিদ্যালয় থেকে প্রত্যয়নপত্র ও প্রসংসাপত্র নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। তাদের পরিবারের সদস্যরা ফসল হারিয়ে অর্থিক সমস্যায় পড়লেও এখানে কোনো কর্ম-সংস্থান কিংবা সরকারি-বেসরকারি সাহায্য সহায়তা পায়নি বলে তারা স্বপরিবারে কাজ করতে এলাকা ছেড়ে যাচ্ছে।

Netrokona

উপজেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, খাদ্য সমস্যাই প্রাথমিক স্তরের প্রায় দুই শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী বাবা-মায়ের সঙ্গে কাজের সন্ধানে চলে গেছে। ফলে চলে যাওয়া শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

খালিয়াজুড়ি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দীক জাগো নিউজকে জানান, উপজেলায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে এখন ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কাগজে-কলমে ৭ হাজার ২শ ৬৬ জন। কিন্তু বর্তমানে এর সংখ্যা সহস্রাধিক শিক্ষার্থী কমে গেছে। অভাবে পড়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় ছেড়ে অন্য স্থানে কাজের সন্ধানে চলে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সামছুজ্জামান তালুকদার সুয়েব সিদ্দিকী জাগো নিউজকে জানান, খালিয়াজুড়ির মানুষের একমাত্র বোরো ফসল আগাম বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এখানে অসংখ্য পরিবারে খাদ্যের অভাবে পড়েছে। এ অভাব মেটাতে অভাবগ্রস্ত পরিবারের শত শত শিক্ষার্থী কাজের উদ্দেশ্যে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে পাড়ি জমাচ্ছে। এ কারণে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তাদের। এসব শিক্ষার্থীদের পরিবারকে আগামী বোরো ফসল ওঠার আগ পর্যন্ত খাদ্য যোগানসহ সরকারি সহযোগিতা না করলে শিক্ষা জীবন থেকে একেবারেই ঝরে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

ফসলহানির পর থেকে শিক্ষাঙ্গনগুলোতে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া শুরু করেছে স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তোফাজ্জল হোসেন জানান, সরকারি সহযোগিতার পেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে।

জেলা কৃষি বিভাগের হিসেবে নেত্রকোনার সাত উপজেলার ৬৭টি ইউনিয়নে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৯৪৫ কৃষক পরিবার আগাম বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে সারা জেলায় ৫০ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে মাসে ৩০ কেজি চাল ও নগদ ৫শ করে টাকা দিচ্ছে সরকার।

এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।