দক্ষিণাঞ্চলের স্বপ্ন পূরণের পথে পদ্মা সেতু


প্রকাশিত: ১০:৪৫ এএম, ৩১ মে ২০১৭

দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের স্বপ্ন পূরণের পথে পদ্মা সেতু। দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে বহু প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর কাজ। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৪৪ শতাংশ।

শরীয়তপুরের জাজিরা-মাওয়া পয়েন্টের পদ্মার তীরে চলছে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণের কাজ। এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবায়নের পথে পদ্মা সেতু।

দিন-রাত পরিশ্রম করছেন তিন হাজারেরও বেশি দেশি-বিদেশি শ্রমিক। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচল করবে যানবাহন ও ট্রেন। এই কর্মপরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছে সবকিছু। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করতে চলছে মহাকর্মযজ্ঞ।

শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে নির্মিত হতে যাচ্ছে দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল, পর্যটন কেন্দ্র, হাইটেক পার্ক, জাহাজ নির্মাণের কারখানা, সোলার প্লান্টসহ বড় বড় সব প্রকল্প। এরই মধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৪৪ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।

Padma-Setu

নির্মিত হয়েছে কনস্ট্রাকশন ইয়ার, সার্ভিস এরিয়া, পুনর্বাসন প্রকল্প। জাজিরা প্রান্তে টোল প্লাজা নির্মাণকাজও প্রায় শেষ। সেতুর কাজ ২০১৮ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুই পাশের সংযোগ সড়ক প্রস্তুত।

সংযোগ সড়কের জন্য কাওড়াকান্দি ঘাট সরিয়ে আনা হয়েছে কাঁঠালবাড়িতে। ফলে ফেরিপথে কমে এসেছে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। জাজিরা প্রান্তের পদ্মা সেতুর মূল সংযোগ সড়ক ও কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে যোগ করতে আট কিলোমিটার সার্বিক সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। ফলে ফেরি থেকে নেমে যানবাহনগুলো যেতে পারবে দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোতে। পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক খুলে দেয়া হয়েছে গত ডিসেম্বর মাসে। পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়ার এক বছর পরও রক্ষণাবেক্ষণসহ নানা কারণে অব্যাহত রাখতে হবে ফেরি যোগাযোগ। পদ্মা সেতুর সুফল ভোগ করবেন দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ।

মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে মাঝিরঘাট ও কাওড়াকান্দিতে লঞ্চ, স্পিড বোট এবং ছোট ছোট ফেরিতে ২১ জেলার কোটি মানুষের যাতায়াত। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসেন পদ্মা সেতুর এলাকা ঘুরে দেখতে। তুলছে ছবি, তুলছেন সেলফি। তুলে আপলোড করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

Padma-Setu

পদ্মা সেতু জাজিরার নাওডোবা পয়েন্টে ঘুরতে আসা আনিসুর রহমান, বেবি আক্তার ও জুয়েল বলেন, আমরা শরীয়তপুর সদর থেকে পদ্মা সেতুর এলাকা ঘুরতে এসেছি। অনেকের মুখে শুনেছি পদ্মা সেতু নাকি করতে পারবে না বর্তমান সরকার। কিন্তু এসে দেখলাম দ্রুতগতিতে চলছে পদ্মা সেতুর কাজ। এখানে না এলে এমন অভিজ্ঞতা হতো না। ভাবতে ভালো লাগছে, আর এক বছর পরই পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় যেতে পারব।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল কাদের জাগো নিউজকে জানান, ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৪৪ শতাংশ। এরই মধ্যে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে সার্ভিস এরিয়া টোলের কাজ শেষ হয়েছে। জাজিরা ও মাওয়ার দুই প্রান্তেই দুটি পরিপূর্ণ পুলিশ স্টেশন বা থানা কমপ্লেক্স নির্মাণ হচ্ছে। এর কাজটুকু শেষ হবে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে।

তিনি জানান, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে সার্বিক নিরাপত্তা বিধান কল্পে ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড ৯৯ দশমিক ৪৪ একর জমিতে জাজিরার নাওডোবা এলাকায় তৈরি হচ্ছে স্থায়ী সেনানিবাস। এছাড়া পদ্মা সেতুর পিলারে (পিআর) সুপার স্ট্রাকচার স্থাপনের কাজ জুন থেকে শুরু হবে। ৪২টি পিলারে ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ২০টি ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। এ ২০টি স্প্যান পিলারের ওপর স্থাপন করতে বাকি ২১টি স্প্যানও তৈরি হয়ে যাবে। স্প্যান স্থাপন শুরু হলে সময় বেশি লাগবে না। ১২ দিন পরপরই একটার পর একটা স্প্যান বসতে থাকবে বলে জানান তিনি।

শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হোসাইন খান জাগো নিউজকে বলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু চালু হলে শরীয়তপুরবাসীর ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। শরীয়তপুরের কৃষিনির্ভর অর্থনীতির চাকা গতিশীল হবে। তৈরি হবে শিল্প-কারখানা। বাড়বে পর্যটন, যুবসমাজ খারাপ কাজ ছেড়ে কর্মজীবনে ঢুকে পড়বে। সমাজের বেকারত্ব দূর হবে।

মো. ছগির হোসেন/এমএএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।