নিজের নামে বাহিনী গড়ে তুলেছে কিশোর সাফায়েত


প্রকাশিত: ০২:৫৫ পিএম, ২৮ মে ২০১৭
খুন হওয়া শাহাজাদা ও সাফায়েত বাহিনীর প্রধান সাফায়েত।

সাফায়েত। পুরো নাম সাফায়েত উল্লাহ সৈকত। বয়স মাত্র ১৬ হলেও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে কোনো দিক থেকে পিছিয়ে ছিল না সে। চমকে যাওয়ার মতো ঘটনা হলো, তারই নেতৃত্বে নগরীতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে চষে বেড়াচ্ছে কথিত ‘সাফায়েত বাহিনী’।

কুমিল্লা নগরীতে অনেকটা ফিল্মি স্টাইলে ওই কিশোর সন্ত্রাসী গ্রুপ ‘সাফায়েত বাহিনীর’ হাতে গত শনিবার রাতে শাহজাদা ইসলাম নামে এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী খুন হওয়ার পর থেকে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে অভিযান চালাচ্ছে। তাকে ধরতে মরিয়া পুলিশের এখন অনেকটা গলদঘর্ম অবস্থা।

নগরীর নজরুল এভিনিউ এলাকায় সাফায়েত বাহিনীর হামলায় নিহত শাহজাদা ইসলাম নগরীর সুজানগর এলাকার ব্যবসায়ী সহিদ মিয়ার ছেলে। সে কুমিল্লা নগরীর পদুয়ার বাজার এলাকার ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল।

ছাত্রলীগকর্মী শাহজাদা কিলিং মিশনে কিশোর সন্ত্রাসী সাফায়েতসহ তার ৭ সহযোগী অংশ নেয় বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে। রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি। শাহজাদা হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ সাফায়েত বাহিনী সম্পর্কে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে বলে জানা গেছে।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাতে কিশোর সন্ত্রাসী সাফায়েত উল্লাহ সৈকতের (১৬) নেতৃত্বে তার ৬/৭ জন সহযোগী ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটির বিবিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র শাহজাদাকে (২০) নগরীর নজরুল এভিনিউ এলাকায় নৃশংসভাবে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতাল এবং পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢামেক হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত শাহজাদার বন্ধু রুমান জানান, শনিবার বিকেলে শাহজাদা তারই বন্ধুর ছোট ভাই ফুয়াদের জন্মদিনের অনুষ্ঠান শেষে মোটর সাইকেলযোগে ২ বন্ধু নিয়ে নগরীর নজরুল এভিনিউ এলাকায় আড্ডা দিতে আসে। সেখানে আসার পর পরিকল্পিতভাবে সাফায়াতসহ ৬/৭ মিলে শাহজাদাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে।

এসময় রুমানকেও কুপিয়ে জখমের চেষ্টা করলে সে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। নিহত শাহজাদা তার ২ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে ৩য় ছিল।

এদিকে রোববার ঢামেকে ময়নাতদন্তের পর শাহজাদার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হলে শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ এ খুনের নেপথ্যে অনেক তথ্য পেয়েছে। বেড়িয়ে আসছে প্রধান ঘাতক সাফায়াতের অপরাধ জগতের অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য।

ছাত্রলীগের জুনিয়র গ্রুপে আধিপত্য বিস্তার, অভ্যন্তরীন গ্রুপিং ও সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব এসব বিষয় খুনের নেপথ্য কারণ হিসেবে নগরজুড়ে বেশ আলোচিত হচ্ছে। এ ঘটনায় পুলিশ ঘাতক সাফায়াতের মা ছাড়াও আরও কয়েকজন বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ওই কিলিং মিশনে ঘাতক সাফায়েত ও তার বাহিনীর আরও ৬/৭ সহযোগী অংশ নিয়েছিল বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে।

স্থানীয় সিটি কাউন্সিলর সৈয়দ মো. সোহেল জানান, এ ঘটনার নেপথ্যে আরও যারা জড়িত রয়েছে সাফায়েত গ্রেফতার হলেই সব রহস্য বেড়িয়ে আসবে।

কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) সালাহ উদ্দিন জানান, পূর্ব বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। হত্যাকাণ্ডের জড়িত প্রধান আসামি সাফায়েতসহ অপর ঘাতকদের গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।

কে এই কিশোর সন্ত্রাসী সাফায়েত : কুমিল্লা নগরীর ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র শাহাজাদা ইসলাম খুনের মূলহোতা স্কুল ছাত্র সাফায়েত উল্লাহ সৈকত জেলার লাকসাম পৌরসভা এলাকার উত্তর-পশ্চিম গাঁ গ্রামের অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আবু মুছা সেলিমের একমাত্র ছেলে।

তার মা সাজেদা চৌধুরী কুমিল্লার একটি বেসরকারি হাসপাতালে দীর্ঘদিন যাবত সেবিকার চাকরি করে আসছিল। গত ৩ মাস আগে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। সাফায়েত তার মায়ের সঙ্গে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের পেছনের গলিতে ‘দারুল জান্নাহ’ নামক ভবনের নিচতলায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে।

সাফায়েত বর্তমানে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড মডেল কলেজের স্কুল শাখার ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে তাকে গত বছর ইস্পাহানী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে তাকে ছাড়পত্র দেয়া হয়।

সূত্র জানায়, ইস্পাহানী কলেজে ৮ম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে সাফায়েত তার এক সহপাঠিকে মারধর করার কারণে নগরীর ঠাকুরপাড়া এলাকার রাব্বি-কিবরিয়া গ্রুপের হামলার শিকার হয়েছিল। ওই সময় ওই গ্রুপ তাকে কুমিল্লা টাওয়ারের সামনে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেছিল।

এ ঘটনায় তাকে ইস্পাহানী কলেজ থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। এতে ওই কলেজ থেকে সে ২০১৬ সালে জেএসসি পরীক্ষা দিতে পারেনি। পরে সে এ তথ্য গোপন করে চলতি বছর লাকসাম আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে সপ্তম শ্রেণি পাসের সার্টিফিকেট এনে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড মডেল কলেজে পুনরায় ৮ম শ্রেণিতে ভর্তি হয়।

সাফায়েত ইতোমধ্যে নগরীর নজরুল এডিনিউ ও মডার্ণ স্কুল এলাকা, পূর্ব ঠাকুরপাড়া, শিক্ষাবোর্ড এলাকা, মনোহরপুর, রামঘাট এলাকাসহ নগরীর বিভিন্ন স্কুলে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে ১০-১২ জনের একটি গ্রুপ গড়ে তুলেছে। এই গ্রুপকে অনেকেই সাফায়েত বাহিনী হিসেবে চিনতো-ভয় পেতো। প্রায় দিন বিকেল ও সন্ধ্যায় ওই গ্রুপকে ওইসব এলাকায় মহড়া ও আড্ডা দিতে দেখা যেত। তাদের উৎপাতে স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ সাধারণ লোকজন অতিষ্ঠ ছিল বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।  

এমএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।