তাজমহল ভেঙে গেছে আকবরের
দুই চোখে আলো নেই, তাই আয়-রোজগারও নেই দৃষ্টিহীন মানুষটার। ছোট্ট একটি ঘর, সেই ঘরে এক ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস তার। আত্মীয়-স্বজনদের দয়ায় জীবন চলে তার। এভাবেই এক দুই করে কেটে যাচ্ছিল জীবন। এই মানুষটির নাম আকবর। মোঘল আমলের শক্তিশালী এক শাসকের নামে তার নাম হলেও জীবনটা তার বড়ই নাজুক।
ধন-সম্পত্তি বলতে নেই তার কিছু। আছে ছোট্ট একটি ঘর। তাই তার কাছে ছোট্ট সেই ঘরটির গুরুত্ব যেন তাজমহলের চেয়েও বেশি। আর সেই তাজমহল ভেঙে গেল তার। না শত্রুপক্ষ তার ঘর ভাঙেনি। ভেঙেছে কালবৈশাখী ঝড়।
পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই দৃষ্টিহীন আকবর আলীর বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌরসভার গোদাগাড়ী গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত সামেদ আলী। আকবর আলী দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে চোখে দেখেন না।
ঝড়ে আকবর আলীর ঘর ভেঙেছে গত এপ্রিলের ৮ তারিখে। এরপর কেটে গেছে এক মাস। অর্থের অভাবে ভাঙা সেই ঘর এখনো মেরামত করতে পারেননি দৃষ্টিহীন এই মানুষটি। এক মাসে তার পাশেও দাঁড়াননি কেউ। যদিও আর্থিক সহায়তার জন্য তিনি উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
ঘর ভেঙে যাওয়া নিয়ে স্ত্রী ফাতেমা বেগম বলেন, তাদের এলাকায় বছরের দ্বিতীয় কালবৈশাখী ঝড় হয় গত ৮ এপ্রিলের রাতে। ওই সময় তারা ঘরের ভেতরেই ছিলেন। হঠাৎ প্রচণ্ড ঝড়ে ঘরের পেছনের একটি খেঁজুর গাছ ভেঙে পড়ে ঘরের টিনের ওপর। সঙ্গে সঙ্গে ওপর থেকে ভেঙে পড়ে ঘরের কাঠামো। এরপর থেকে তারা ওই ভাঙা ঘরের ভেতরেই কোনরকমে বসবাস করছেন। বৃষ্টি এলেই ভিজে যায় ঘরের সবকিছু।
ফাতেমা বেগম আরো জানালেন, তার স্বামী আগে চোখে দেখতেন। তখন তিনি নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। প্রায় ২৫ বছর আগে তার চোখের ওপর জলবসন্ত হলে তিনি দু`চোখের দৃষ্টি হারান। এরপর থেকে আত্মীয়-স্বজনদের সাহায্য-সহযোগিতায় কোনোরকমে তাদের সংসার চলে। আত্মীয়-স্বজনরাই বিয়ে দিয়েছেন তার চার মেয়ের। একমাত্র ছেলে রমজান আলীর বয়স মাত্র ১০ বছর। সংসারে কোনো আয় না থাকায় তিনি ভেঙে যাওয়া ঘর মেরামত করতে পারছেন না।
ফাতেমা বেগম বলেন, আর্থিক সহায়তার জন্য তিনি উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সেদিক থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। মানবিক দিক বিবেচনা করে ঘর মেরামতের জন্য উপজেলা প্রশাসনসহ সমাজের বিত্তবানদের সাহায্য কামনা করেছেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) খালিদ হোসেন জাগো নিউজকে জানান, দু`একদিনের মধ্যেই দৃষ্টিহীন আকবর আলীর বাড়ি পরিদর্শনে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে। এরপর তার জন্য সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা করা হবে।
শাহরিয়ার অনতু/এমজেড/এমএস