রৌমারীতে বন্যার্তদের হাহাকার


প্রকাশিত: ১০:০১ এএম, ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৪

ঘরে বাইরে অথৈ পানি। খাবার নেই, নেই বিশুদ্ধ পানি। শিশু বৃদ্ধ আর গবাদি পশু নিয়ে হয়েছে আরেক জ্বালা। তাদের খাবার চাই। দীর্ঘ ১৮ দিন থেকে এ ব্যহাল অবস্থার মধ্যে রয়েছে রৌমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র চরের ৬৫ হাজার জনমানুষ। দূর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছে না তাদের। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ে থাকে ত্রাণের একটা প্যাকেটের আশায়। মালবাহি নৌকা দেখলেই শিশুরা শূন্যে হাত তুলে ডাকতে থাকে। সবগুলো তো আর ত্রাণের নৌকা নয়। ফলে হতাশ হয় তারা। কদাচিৎ মেলে ত্রাণের দেখা। বিত্তবানরা ব্যক্তিগতভাবে এবং এনজিওগুলো সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারপরও প্রয়োজনের তুলনায় সেটা একেবারেই অপ্রতুল।

হাজার হাজার মানুষ কিঞ্চিৎ উঁচু, বাঁধ ও রাস্তায় ঠাঁই নিয়েছে। এছাড়া কোথাও কোন জায়গা নেই। খোলা আকাশের নিচে চলছে জীবন যুদ্ধ। এমনই একটি চরের নাম ‘পাখিউড়া’। ওই গ্রামের কদভানু বেওয়ার (৭৫) বললেন, ‘আমাগো দিকে ক্যারা দেখবো? অনেক দিন থেইক্যা পানিতে ভাসতাছি কিন্তু কেউ তো দেখতে আইলো না। এইতো আমাগো গরিবের কপাল।’

খেদাইমারি গ্রামের আছিয়া বেগম স্থানীয় এনজিও আরএসডিএ’র ত্রাণ নিতে এসেছেন। তিনি জানান, ১৮ দিন ধইরা পানিতে ডুইবা আছি। খোঁজ নেবো ক্যারা? সরকার তো আমগোর দিকে দেহে না।’

সিএলনপি’র আওতাও রোববার রৌমারীর বন্দবেড় ইউনিয়নের ৩টি চরের ১৩’শ বন্যার্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করে আরএসডিএ। প্রতি প্যাকেটে ১০ কেজি চাল, ২ কেজি ডাল, ২ কেজি আলুসহ ১ হাজার ৫৮টাকা মুল্যের বেশকিছু সামগ্রি। ত্রাণ নিতে আসা মানুষের হাহার দেখে অতিমাত্রায় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এনজিওটির কর্তাব্যক্তিগণ। একটা প্যাকেট পাবার আশায় ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষার প্রহর যেন কাটে না। আর ত্রাণের নৌকা এলেই পড়ে যায় হুড়োহুড়ি। এসব যেন চরের মানুষের এখন নিত্য দিনের প্রতিচ্ছবি।

জানা গেছে, সরকারীভাবে এ পর্যন্ত ৩০ মে. টন চাল দেয়া হয়েছে। ৬৫ হাজার বন্যার্ত মানুষের জন্য এ ত্রাণ মাথাপিছু কতটুকু পড়েছে তা হিসেব করলেই উত্তর মিলবে। পাশাপাশি প্রথম দিকে বিত্তবানরা ও এনজিওগুলো বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ায়নি। বন্যার্তরা অভিযোগ করেন, এখন যা দেয়া হচ্ছে এটা এর আগে দিলে মানুষের এত দুরাবস্থা হতো না।

উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী বলেন, সরকারীভাবে এ পর্যন্ত রৌমারী উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ৩০ মে. টন চাল বিতরণ করা হয়েছে যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম।

ইউএনও আব্দুল লতিফ খান জানান, চাহিদা দেয়া হয়েছে পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দাতা সংস্থা সমাজ উন্নয়ন’র কুড়িগ্রাম জেলা ম্যানেজার বাসুদেব চক্রবার্তী জানান, আমরা যা করছি নেহাতই বিবেকের তাড়নায়। চেষ্টা করছি মানুষ না খেয়ে যেন মারা না যায়। কিন্তু এ সামান্য ত্রাণ দিয়ে কি বিশাল জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটানো যায়?

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।