কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীদের মানবেতর জীবন


প্রকাশিত: ০৪:২২ পিএম, ২৩ মে ২০১৭

নওগাঁয় কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপি) গত চার মাস থেকে বেতন পাচ্ছেন না। কবে নাগাদ বেতন পাবেন সে ব্যাপারেও কেউ কিছুই বলতে পারছেন না।

ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাদের। নিয়মিত বেতন-ভাতাদি না পাওয়া, ইনক্রিমেন্ট না থাকা, চাকরি রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।

তাদের চাকরির অনিশ্চয়তা এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে। অপরদিকে ঠিকমতো ওষুধ সরবরাহ না থাকায় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রামের দরিদ্র মানুষ।

সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ১১টি উপজেলায় ৯৯টি ইউনিয়নে ৩০০টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। বর্তমানে ২৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকে সিএইচসিপি পদ শূন্য রয়েছে। সেখানে স্বাস্থ্য সহকারী (এইচএ) দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। গত ছয় মাসে নারী, পুরুষ, গর্ভবতী, মা ও শিশুসহ সেবা প্রদান রোগীর সংখা প্রায় সাড়ে ১২ লাখ।

গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে বর্তমান সরকার ২০১১ সালে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম চালু করেন। সিএইচসিপিদের নিয়োগের পর থেকে তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধার সংমিশ্রনে কমিউনিটি ক্লিনিক আজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

সারা পৃথিবীতে এটি এখন রোল মডেল হিসেবে পরিচিত। এই প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফা বৃদ্ধির পর সিএইচসিপিদের চাকরির মেয়াদ ২০১৬ সালের ১৪ জুনে শেষ হয়। নিয়োগের পর থেকে এসব সিএইচসিপিদের চাকরি জাতীয়করণের আশ্বাস দেয়া হয়। কিন্তু সে আশা যেন গুড়েবালি। তাদের কাজের পরিধি বেড়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক আজ ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে। কিন্তু তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আশার ঘরে যেন দুরাশার প্রদীপ জ্বলছে তাদের মনে। সাফল্যের মূল কারিগররা আজ হতাশ।

কমিউনিটি বেসড হেলথ কেয়ার প্রকল্পের অধীনে তাদের চাকরি ন্যস্ত করা হলে গত ডিসেম্বর মাসে তারা সর্বশেষ বেতন পেয়েছেন। এরপর থেকে চারমাস ধরে কোন বেতন না পাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের।

সরকারি চাকরির যাদের বয়স ছিল জীবিকার তাগিদে অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। ইতোমধ্যে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। আরও অনেকে এ পেশা ছাড়বেন বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে সরকারি চাকরির বয়স যাদের শেষ হয়ে গেছে তারা এখন হতাশ হয়ে পড়েছেন। না পারছে এই পেশা ছাড়তে। না অন্য পেশায় যেতে।

অপরদিকে ঠিকমতো ওষুধ সরবরাহ না থাকায় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রামের দরিদ্র মানুষ। ফলে স্বাস্থ্য সেবা অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। এতে অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়ার উপক্রম হচ্ছে সরকারের কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম। 

স্বাস্থকর্মীরা বলেন, স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে মহিলা, প্রসূতি মা ও শিশুদের সংখ্যাই বেশি। প্রতি দুই মাসের শিশুদের জন্য বরাদ্দ ওষুধ মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। ঠিকমতো ওষুধ না পাওয়া এবং চাহিদা তুলনায় সরবরাহ কম।

আত্রাই উপজেলার বিশা কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি ফেরদৌসি পারভীন বলেন, চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর না হওয়ায় দুশ্চিন্তা ও হতাশায় আছি। দীর্ঘদিন থেকে বেতন না পাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

নওগাঁ সিভিল সার্জন ডা. রওশন আরা খানম ওষুধের স্বল্পতা আছে স্বীকার করে বলেন, আগে বছরে ছয় প্যাকেট ওষুধ ছিল। বর্তমানে আট প্যাকেট ওষুধ কমিউনিটি ক্লিনিকে দেয়া হয়। এছাড়া আরও ওষুধ বাড়ানোর প্রয়োজন আছে। এটি একটি প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত। সিএইচসিপিদের বেতন কয়েক মাসের একবারে আসে। যেহেতু বেতন বন্ধ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

আব্বাস আলী/এএম/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।