কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদনে ধস
অস্তিত্ব সঙ্কটে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। বর্তমানে পানি সংকট কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনে মারাত্মক ধস নেমেছে। কেন্দ্রে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় কাপ্তাই লেকের পানি। কিন্তু বর্তমান মৌসুমে লেকের পানি নিম্ন স্তরে নেমে যাওয়ায় পানির সংকট তৈরি হয়েছে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে।
পানি সংকটে ২৩০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির পাঁচটির মধ্যে চার ইউনিটেই উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এখন সচল ২ নম্বর ইউনিট থেকে উৎপাদন করা যাচ্ছে মাত্র ৪০-৪৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এদিকে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বিপর্যয়ে রাঙ্গামাটিসহ সংযুক্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে। ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। একাধারে ঘটছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। লোডশেডিং চলছে রাতদিন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন গ্রাহকরা।
এছাড়াও বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের সূত্র মতে, প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়ায় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে রাঙ্গামাটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। বিভিন্ন কেভি লাইনে ফল্ট দেখা দেয়ায় গত কয়েকদিন ধরে দফায় দফায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটছে।
কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, কাপ্তাই হ্রদে এখনও দ্রুত পানি কমছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থার উত্তরণ ঘটবে না। এ সময়ে হ্রদে পানি থাকার কথা ১০৯ ফুট। কিন্তু বর্তমানে আছে ৮১ দশমিক ২ ফুট। ৭০ ফুটের নিচে নামলে বিপদজ্জনক অবস্থায় চলে যাবে। এ অবস্থা চলতে থাকলে যেকোন মুহূর্তে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
উল্লেখ্য, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে ১৯৬০ সালে নির্মিত হয় কাপ্তাই বাঁধ। এতে সৃষ্টি হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলরাশি কাপ্তাই লেক। কিন্তু সৃষ্টির পর এ পর্যন্ত একবারও ড্রেজিং বা খনন করা হয়নি কাপ্তাই লেক। ফলে দিন দিন পলি ও বর্জ্য জমতে জমতে দ্রুত ভরাট হয়ে যাচ্ছে হ্রদের তলদেশ। এছাড়া প্রতিনিয়ত দখল ও দূষণের কবলে পড়ে ক্রশম: নাব্যতা হারিয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে কাপ্তাই লেক। এর ফলে লেকে দ্রুত পানি ধারণ ক্ষমতা কমছে। এতে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র।
কর্তৃপক্ষ জানায়, দেশে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যেখানে প্রতি ইউনিট উৎপাদন খরচ পড়ে ২০-২২ টাকা সেখানে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতি ইউনিট উৎপাদন খরচ মাত্র ২৫-৩৫ পয়সা। এত কম খরচে কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন সম্ভব হলেও এ কেন্দ্রের ওপর বিশেষ কোনো সুনজর নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এর কয়েক বছর আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এই কেন্দ্রের আধুনিকায়ন এবং ৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন আরও দুটি ইউনিট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিলেও তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। নানা কারণে তা আলোর মুখ দেখছে না।
সুশীল চাকমা/এমজেড/আরআই