সবাই আড়চোখে দেখত, খুব কান্না পেত


প্রকাশিত: ০১:২৫ পিএম, ১৮ মে ২০১৭

আমি বাইসাইকেল চালিয়ে গ্রাম থেকে স্কুলে যেতাম তাই আমার বান্ধবীরা আমাকে অবহেলা করত। ভালো পোশাক পরতে না পারায় সব সময় ছোট করত। যখন সাইকেলে চালিয়ে যেতাম, তখন সবাই আমার দিকে আড়চোখে দেখত। আমার খুব কান্না পেত।

টাকার অভাবে প্রাইভেট পড়তে পারিনি। ভালো পোশাক পরে স্কুলে যেতে পারিনি। প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও দিন দিন সয়ে যায়। আমার খুব ইচ্ছা আমি মেডিকেল কলেজে পড়ে একজন চিকিৎসক হব। কিন্তু আমার বাবার সামর্থ্য নেই। মনের দুঃখ আর চাপা ক্ষোভ এভাবেই প্রকাশ করেছে অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৗস খুশি।

সে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দক্ষিণ বাড়াইপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র দিনমজুর আলতাফ হোসেনের মেয়ে। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় হাতীবান্ধা এসএস মডেল হাইস্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ ও সর্বোচ্চ ১১৪৯ নম্বর পেয়ে কৃতিত্ব লাভ করে।

অভাব অনটনে বেড়ে ওঠা দরিদ্র ঘরের অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৗস খুশি। গ্রাম থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে বাইসাইকেল চালিয়ে হাতীবান্ধা এসএস মডেল হাইস্কুলে এসে পড়াশোনা করত।

jannatul

ভালো খাবার ও ভালো পোশাক কোনোদিন জুটেনি তার। তারপরও মনোবল হারায়নি এই মেধাবী শিক্ষার্থী। ছোট থেকেই ছিল তার অদম্য মেধা। সে ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছিল।

মা নাজমা বেগম গৃহিণী। তাদের রয়েছে শুধুমাত্র ৬ শতাংশের জমির ওপর একটি টিনের ঘর। বাবার দিনমজুরির টাকা দিয়ে চলে তাদের সংসার ও দুই বোনের লেখাপড়ার খরচ। স্বল্প আয় দিয়ে সংসারের খরচ জোগানো খুশির বাবার পক্ষে কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

জান্নাতুল ফেরদৗস খুশি চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু সেই স্বপ্নে একমাত্র বাধা হয়ে আছে দরিদ্রতা। তাই বর্তমানে সাফল্যে এলেও ভবিষ্যতের স্বপ্ন পূরণে শঙ্কা কাটছে না খুশির।

তার বাবা আলতাফ হোসেন বলেন, দিনে যে রোজগার হয় তাই দিয়ে চলে সংসার ও দুই মেয়ের পড়াশোনার খরচ। মেয়ে তো ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখে কিন্তু আমার তো সামর্থ্য নেই।

হাতীবান্ধা এসএস মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম জুয়েল বলেন, এই শিক্ষার্থী পারিবারিকভাবে দরিদ্র হলেও মেধাবী। কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সহায়তা পেলে সে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে।

রবিউল হাসান/এএম/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।