জমি লিখে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে বের করে দিল সন্তানরা


প্রকাশিত: ০২:৪০ পিএম, ১৬ মে ২০১৭

বাড়ির জমি লিখে নিয়ে ৮৭ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে বের করে দিয়েছেন তার সন্তানরা। এ ঘটনায় পর অসুস্থ অবস্থায় দীর্ঘ ৬ মাস ধরে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার কাওয়াক ২০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি আছেন তিনি।

যাওয়ার কোনো জায়গা না থাকায় হাসপাতালের খাবার খেয়েই মানবেতর জীবনযাপন করছেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া পৌর মহল্লার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মাদ রজব আলী (৮৭)।

গত সোমবার দুপুরে ওই হাসপাতালে গেলে দেখা মেলে অসুস্থ মোহাম্মাদ রজব আলীর। সেখানেই কথা হয় তার সঙ্গে। কান্না কান্না কণ্ঠে জানান, আমি ৬ মাস ধরে অসুস্থ হয়ে রয়েছি এবং হাসপাতালের খাবার খেয়ে বেঁচে আছি। এই পৃথিবীতে আমি আর আমার মুক্তিযুদ্ধের কাগজ ছাড়া কিছুই নেই।

Rojob

তিনি বলেন, আমার জন্ম হয়েছিল উল্লাপাড়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত বাবর আলী মঙ্গলের ঘরে। আমার সহধর্মিণী কয়েক বছর আগে মারা গেছে এবং ২ ছেলে ও ১ মেয়ে আছে। কিন্তু আমার সহধর্মিণী মারা যাবার পর ছেলেরা কৌশলে ছোট একটু বাড়ি ও ঘর লিখে নেয় এবং আমার ঘরে নাতি-নাতনি বৌকে তুলে দেয়। তাই ওই বাড়িতে আর আমার থাকার জায়গা হয় না। তাই আমি অসুস্থ মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নেই আর এখানকার খাবার খেয়ে বেঁচে আছি।

৮৭ বছর বয়সী এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, আমি পলাশ ডাঙ্গা যুবশিবিরের মহানায়ক আব্দুল লতিফ মির্জা ও খোরশেদ আলমের নেতৃত্বে দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছি এবং ওই সময় লতিফ মির্জা আমাকে মুক্তিযুদ্ধের কাগজ দিয়েছেন। আমি কখনও ভাতার কথা ভাবিনি। তবে আমার এই অবস্থা দেখে উল্লাপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মারুফ বিন হাবিব এক খানা বয়স্কভাতার কার্ড করে দিয়েছেন। শুনেছি প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের কার্ড দিচ্ছেন, ভাতা দিচ্ছেন তিনি যদি আমাকে সাহায্য করতে তাহলে জীবনের শেষ কয়েকটা দিন ভালোভাবে চলে ফিরে খেতে পারতাম।

উল্লাপাড়ার কাওয়াক ২০ শয্যা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আরএমও সামিউল ইসলাম রনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গত নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে কে বা কাহারা অসুস্থ অবস্থায় তাকে রেখে যায়। আমরা তাকে ১৫নং বেডে ভর্তি করে চিকিৎসা করে আসছি এবং নিয়মিত খাবার পরিবেশন এবং খোঁজখবর রাখছি। তিনি বার্ধক্যজনিত ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছেন। তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। ৬ মাসের মধ্যে তার এক নাতি একদিন খাবার নিয়ে আসছিল। তাছাড়া আর কোনো মানুষের খোঁজ মেলেনি।

Rojob

তিনি আরও জানান, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে একটা দাবিই জানাচ্ছি সময় থাকতে এমন অসহায় দুস্থ মুক্তিযোদ্ধার পাশে দাঁড়ান এবং তাকে মুক্তিযুদ্ধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।

অসহায় এই মুক্তিযোদ্ধার খবর পেয়ে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন জেলার শাহজাদপুর উপজেলার তরুণ মানবসেবক মামুন বিশ্বাস। তিনি তার ফেসবুক ওয়ালে এই মুক্তিযোদ্ধার জন্য সাহায্যের জন্য আবেদনও করেছেন।

কেউ যদি অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মাদ রজব আলীকে সাহায্য করতে চান তাহলে মামুন বিশ্বাসের (01722-378461) মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারে।

এমএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।