ছেলের মৃত্যুর শোকে ১৫ বছর শিকলে বাঁধা রিপন


প্রকাশিত: ০২:০১ পিএম, ১৪ মে ২০১৭

মাদারীপুরের কালকিনিতে প্রায় ১৫ বছর ধরে শিকলে বাঁধা মো. রিপন বেপারি বন্দিদশা থেকে এখনও মুক্তি পাননি। গত কয়েকদিন ধরে তাকে নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় ফলাও করে সংবাদ প্রকাশ করা হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। টনক নড়েনি সমাজের বিবেকবানদের।

অপরের ক্ষতি করবেন এমন আশঙ্কায় তাকে তার পরিবার পায়ে শিকলবন্দি করে রেখেছেন বলে জানা যায়। এখন সে মুক্তি চান, চান সুন্দর একটি স্বাভাবিক জীবন। কেউ শোনে না তার এ আকুতি। তিনি কাউকে দেখেই বলতে থাকেন আমাকে মুক্তি দিন। রিপন পৌর এলাকার চরলক্ষ্মী গ্রামের আবদুস কুট্টি বেপারির ছেলে।

শিকলে বাঁধা অবস্থায় রিপন সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, তিনি প্রথমে সমাজের একজন ভালো মনের মানুষ ছিলেন। তার একটি সাজানো সংসার ছিল। ছেলে মেহেদী হাসান ও স্ত্রী সালেহা বেগমকে নিয়ে চলছিল তার পরিপাটি জীবন। কিন্তু ৮ বছর বয়সে তার ছেলে মেহেদী হাসান মারা যায়। এরপর থেকেই শোকে কাতর হয়ে যান রিপন।

অন্যদিকে স্ত্রী সালেহা বেগম অন্য পুরুষের সঙ্গে বিয়ে করে চলে যায়। এতে সে আরও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। এরপর তাকে তার বাবা বাড়ির একটি পরিত্যক্ত ঘরে পায়ে শিকল বেঁধে বন্দি করে রাখে। সেই থেকে শিকলে বাঁধা বন্দি অবস্থায় পার হয়ে যায় তার জীবনের ১৫টি বছর। এমন জীবন থেকে সে এখন মুক্তি চায়, চায় সুন্দর একটি স্বাভাবিক জীবন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বন্দি রিপনের বাবা আবদুস কুট্টি বেপারি বলেন, স্ত্রী-সন্তান হারিয়ে রিপন পাগল হয়ে গেছে। রিপন যাতে অপরের কোনো ক্ষতি করতে না পারে এজন্য তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে একটি ঘরে বন্দি রাখা হয়েছে।

মানবাধিকার কর্মী নেছারউদ্দিন বলেন, রিপনকে এভাবে আটকে রাখা সম্পূর্ণ অমানবিক। আমার মতে তাকে মুক্তি দেয়া উচিত।

চিকিৎসক মৃণাল মজুমদার বলেন, রিপন বেপারিকে আটকে না রেখে সঠিক চিকিৎসা সেবা দিলে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, রিপনের আটকের বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে এ বিষয়ে কেউ রিপনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করলে তাকে পুলিশ দিয়ে উদ্ধার করা যেতে পারে।

এ কে এম নাসিরুল হক/এমএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।