অপারেশন ‘সান ডেভিল’ ফের শুরু


প্রকাশিত: ০৩:৫১ এএম, ১২ মে ২০১৭

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার হাবাসপুরের জঙ্গি আস্তানায় ‘অপারেশ সান ডেভিল’ আবার শুরু হয়েছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে অভিযান শুরু হয়। এখনও ওই আস্তানা ঘিরে রেখেছে পুলিশ। বলবৎ রয়েছে ১৪৪ ধারা।

ধান খেতের মাঝখানে টিনের তৈরি বাড়িটির সঙ্গে লাগোয়া কোনো ঘরবাড়ি নেই। তবে কাছাকাছি দূরত্বে যে কয়টি বাড়ি আছে শুক্রবার সেগুলো খালি করে অভিযান শুরু করে পুলিশ।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে জঙ্গি আস্তানার পাশেই এক ব্রিফিংয়ে এ অভিযান রাতের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মাসুদুর রহমান ভূঁইয়া।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে জঙ্গি আস্তানা এলাকার বাইরে এসে পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক মাসুদুর রহমান ভুঁইয়া সাংবাদিকদের জানান, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিশেষ শাখার বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঘটনাস্থলে এসেছে। তখন রাত নেমে গেছে। কৌশলগত কারণেই ‘সান ডেভিল’ স্থগিত করা হয়েছে। শুক্রবার সূর্যোদয়ের পর এই অভিযান আবারও শুরু হবে।

তিনি জানান, বুধবার রাত ১টার দিকে পুলিশ বাড়িটি ঘেরাও করে। এরপর বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ভেতরের জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু এতে তারা সাড়া দেননি। এরপর দমকল কর্মীরা মাটির দেয়াল গলানোর বাড়িটিতে পানি ছিটাতে শুরু করেন।

এ সময় জঙ্গিরা বের হয়ে নিজেদের কাছে রাখা বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। আঘাত করেন ধারাল অস্ত্র দিয়ে। এক পর্যায়ে আত্মঘাতী বিস্ফোরণেই মৃত্যু হয় পাঁচ জঙ্গির। আর তাদের বোমার স্প্রিন্টার ও ধারাল অস্ত্রের আঘাতে মারা যান দমকল কর্মী আব্দুল মতিনের।

পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদুর রহমানের দেয়া তথ্য মতে, জঙ্গি আস্তানায় নিহতরা হল বাড়ির মালিক সাজ্জাদ হোসেন (৫০), তার স্ত্রী বেলী আক্তার (৪৫), তাদের ছেলে আল-আমিন (২০), মেয়ে কারিমা খাতুন (১৭) ও অপর এক বহিরাগত জঙ্গি আশরাফুল (২৫)। জঙ্গি আশরাফুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার দেবীনগর এলাকার বাসিন্দা। তিনি বড় মাপের জঙ্গি।

পুলিশ বলছে, সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী বেলী আক্তার কুপিয়ে হত্যা করেছেন দমকল কর্মী আব্দুল মতিনকে। আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন অন্যরা। এ সময় সাজ্জাদের আরেক মেয়ে সুমাইয়া দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে বসে তা দেখছিলেন। এর তিন ঘণ্টা পর তিনি আত্মসমর্পণ করেন।

এদিকে, নিহত জঙ্গি আশরাফুলকে দিনভর জঙ্গি সাজ্জাদের ছেলে সোয়াইব হোসেন হিসেবেই ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু জঙ্গি আস্তানা থেকে আত্মসমর্পণ করা সাজ্জাদের সুমাইয়া বেগম জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছেন, নিহত ওই জঙ্গি আশরাফুল। অভিযানের সময় তার ভাই সোয়াইব হোসেন বাড়িতে ছিলেন না। বর্তমানে এই তিনজন গোদাগাড়ী মডেল থানায়।

রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) মোয়াজ্জেম হোসেন ভুঁইয়া জানান, জঙ্গি আস্তানার চারপাশে চারপাশে এখনো ১৪৪ ধারা বলবৎ রয়েছে। নিহত পাঁচ জঙ্গির মরদেহ বাড়ির পাশে কেটে নেয়া ধানখেতে পড়ে আছে। শুক্রবার সকালে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হতে পারে।

এদিকে, দমকল কর্মী আব্দুল মতিন নিহতের ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে যান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেনটেন্যান্স) এ কে এম শাকিল নেওয়াজ। সেখানে তিনি বলেন, গঠিত ওই তদন্ত কমিটি ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। এরপর ব্যবস্থা নেবেন তারা।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।