পাহাড়ে পেঁপে চাষের গল্প


প্রকাশিত: ০৫:২৯ এএম, ১০ মে ২০১৭

অনাবাদী পরিত্যক্ত পাহাড়ি জমিতে পেঁপে চাষ করে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে নিপুণ বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যার (৩২)। তিনি রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা। কৃষি ডিপ্লোমাধারী এই নিপুণ বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা পেঁপে চাষ করে এখন আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ও স্বাবলম্বী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাম্প্রতিক মৌসুমে কেবল নিপুণ বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা নয়, তার সাফল্য দেখে আশেপাশে পেঁপে চাষ করে ইতোমধ্যে আরও অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন। বিদেশি জাতের হাইব্রিড পেঁপের উচ্চফলনে পাহাড়ি এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পেঁপে চাষ। উচ্চফলন আর লাভজনক হওয়ায় রাঙামাটিসহ পার্বত্যাঞ্চলে ব্যাপকহারে বেড়েছে পেঁপের আবাদ। রাঙামাটির পেঁপে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে জেলার বাইরেও।

এদিকে অন্যতম সবজি কাঁচা পেঁপের চাহিদা পাকা পেঁপের চেয়েও অধিক। ফলে স্থানীয়সহ বিভিন্ন বাজারে কাঁচা বা পাকা পেঁপে দামে সব সময় ভালো। স্থানীয় বাজারে বর্তমানে ওজন ও আকার ভেদে প্রতিটি পাকা পেঁপের দাম ৩০-১০০ টাকা। আর সবজি হিসেবে কাঁচা পেঁপে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০-৩০ টাকায়।

সফল পেঁপে চাষি নিপুণ বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা জানান, কৃষি ডিপ্লোমা শেষ করে দুই বছর আগে কাপ্তাইয়ের ওয়াগ্গায় নিজের পাহাড়ের ঢালু জমিতে ২শ চারা লাগিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করেন পেঁপে চাষ। এতে তার ব্যাপক সাফল্য আসে। এরপর গত বছর ৯শ পেঁপে চারা লাগান। এতে অভাবণীয় পেঁপের ফলন আসে তার। খেতে উৎপাদিত পেঁপে বিক্রি করে উপার্জন করেছেন প্রায় ৮-৯ লাখ।

তিনি বলেন কৃষিতে ডিপ্লোমা শেষ করেও তার চাকরি মেলেনি। থাকতে হয়েছে অভিশপ্ত বেকার জীবন নিয়ে। শেষে বেকারত্বের অভিশাপ দূর করতেই বেছে নিই পেঁপে চাষ। এতেই আসে সাফল্য। এখন খুব ভালো আছি। স্বচ্ছলভাবে চলছে পরিবার। সংসারে আর অভাব অনটন নেই। বর্তমানে স্থানীয়ভাবে খুচরা দরে প্রতি কেজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকায়। পেঁপে চাষে নির্দিষ্ট কোনো মৌসুম লাগে না। সব মৌসুমেই অর্থ্যাৎ বারো মাস পেঁপের চাষ হয়।

pape

আশেপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, নিপুণের সফলতা পেঁপে চাষে উৎসাহী করেছে তাদের। বর্তমানে এলাকার অনেকে ঝুঁকছেন পেঁপে চাষে। হচ্ছেন স্বাবলম্বী। দূর হচ্ছে বেকারত্ব। তাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পেঁপে চাষ। পাশের পাহাড়ি ছড়া থেকে পানি সংগ্রহ করে পেঁপে চাষ করছেন চাষিরা।

এ বিষয়ে কাপ্তাই উপজেলাা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সুস্মিতা চাকমা বলেন, পেঁপে চাষ লাভজনক, স্বল্পপূঁজির ও স্বল্প পরিশ্রমের। পাহাড়ের ঢালু জমি পেঁপে চাষের জন্য উপযোগী। কাপ্তাইয়ে পেঁপে চাষ দিন দিন বাড়ছে। এ বছর উপজেলায় ১৪৫ হেক্টর জমিতে পেঁপে চাষ হয়েছে। পেঁপের দাম আগের তুলনায় এখন বেশি। চাহিদাও অনেক। এসব কারণে স্থানীয়ভাবে পেঁপে চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। আমরা আগ্রহী চাষিদের পরামর্শসহ বিভিন্ন সহায়তা দিচ্ছি।

তিনি আরও জানান, অধিক ফলনে স্থানীয় বাজার ছাড়াও প্রতিদিন রাঙামাটির পেঁপে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বাইরে বাজারজাত হয়ে যাচ্ছে। শুধু পেঁপে নয়- কৃষি পরামর্শসহ প্রশিক্ষণ নিয়ে সঠিক চাষাবাদে পাহাড়ের মাটিতে যেকোনো ফসলের উচ্চফলন সম্ভব।

এফএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।