নিহত পাইলট তামান্নার পরিবারের বিচার দাবি


প্রকাশিত: ০৮:৫৬ এএম, ০৪ মে ২০১৫

রাজশাহী হযরত শাহ মুখদুম এয়ারপোর্টে বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমি অ্যান্ড সিভিল অ্যাভিয়েশনের একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রশিক্ষণার্থী তামান্না রহমান হৃদির মৃত্যুর বিচার দাবি করেছেন তার পরিবার। সোমবার সকালে নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট এলাকার একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ বিচার দাবি করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান নিহত প্রশিক্ষণার্থী তামান্নার মা রেহানা ইয়াসমিন।

এসময় তিনি বলেন, চলতি বছরের গত ৩১ মার্চ মঙ্গলবার দুপুরে নিহত তামান্না একক ফ্লাইট সম্পন্ন করে। পরের দিন পহেলা এপ্রিল একক নাইট পার্টি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারপরও ওই দিন দুপুর ১টা ৫৮ মিনিটে ফ্লাইট ইন্সট্রাক্টর সাইদ কামাল তার মেয়ে প্রশিক্ষণার্থী তামান্নাকে নিয়ে প্রশিক্ষণের জন্য বিমান নিয়ে উড্ডয়ন করেন। প্রশিক্ষণ চলাকালে তিনি মাত্র ১৮০ ফিট উচ্চতা থেকে টার্ন নিয়ে বিমানটি সোজা রানওয়েতে অবতরণ করেন। যেখানে প্রশিক্ষক সাইদ কামালের বিমানটি নিয়ে ছয়`শ ফিট উচ্চতা থেকে টার্ন ল্যান্ড করার কথা ছিল। তবে তিনি কি কারণে প্রশিক্ষণের নিয়ম অনুযায়ী টার্নল্যান্ড করলেন না তা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন। আর ল্যান্ড করতে গিয়ে কি কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হলো তার প্রকৃত কারণ এখনো রহস্যের আঁধারে রয়েছে।

এসময় তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, বিমানটি রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে বিধ্বস্ত হওয়ার সময় তাতে আগুন ধরেনি। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বিমান বন্দরের রানওয়ের পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা অটো রিকশাচালক লুৎফর রহমান, আনোয়ারুল ইসলাম, তার বোনের স্বামী রবিউল ইসলাম এবং ডাবলু।
 
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে তিনি আরো বলেন, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার প্রায় ১০ মিনিটের অধিক সময় পর একাডেমির ফ্লাইট ইন্সট্রাক্টর সাইদ কামাল বেরিয়ে আসলেন। কিন্তু তখনো তার মেয়ে তামান্না বাঁচার আকুতি করছিলেন। কিন্তু তার পরেও তাকে বাঁচানোর কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। পরে গোটা বিমানে আগুন ধরে তার মেয়েকে আগুনে পুড়ে কয়লা হতে হয়েছে।

সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যেকোন ফ্লাইং একাডেমি এবং সিভিল অ্যাভিয়েশনসহ যেকোন এয়ারপোর্টের রানওয়েতে ২৪ ঘণ্টা ফায়ার সার্ভিস টিম, রেসকিউ টিম, অ্যাম্বুলেন্স রেডি থাকাতে হবে। যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে ২ মিনিটের মধ্যে যাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়। কিন্তু সেদিন রাজশাহী হযরত শাহমুখদুম এয়ারপোর্টে কিছুই ছিলনা। ঘটনার প্রায় আধা ঘণ্টা পরে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছায় যখন তার মেয়ে আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যায়।

পরে তিনি ফ্লাইং একাডেমি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, এই একাডেমিতে তিন দশকেরও বেশী পুরানো এয়ার ক্রাফট এবং প্রায় ভাঙা প্লেন দিয়ে প্রশিক্ষাণার্থীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। নষ্ট সিট বেল্ট, নষ্ট হুইল, পুরনো ক্ষয়ে যাওয়া ইঞ্জিন আর ভূয়া চিফ ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে চালানো হচ্ছে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। আর এ কারণে এসব একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে ফারিয়া-লারা, রফিকুল ইসলাম, সাকিব, কামরুল ইসলাম ও তামান্নার মতো তরুণ পাইলটদের মৃত্যুর জন্য কর্তৃপক্ষের বিচার দাবি করেন তিনি।

সম্মেলনে এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ডা. হেদাতুল ইসলাম, ডা. আনিসুর রহমানসহ নিহতের পরিবারের সদস্যরা।

শাহরিয়ার অনতু/এমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।