কাজে আসছে না আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব ও গবেষণা কেন্দ্র
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের নেয়ামত নগরে ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আম গবেষণা কেন্দ্র। এরপর ১৯৯০ সালে নাম পরিবর্তন করে সেটি আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব ও গবেষণা কেন্দ্রে রুপান্তরিত হয়। নামের পরিবর্তন হলেও গবেষণা কাজের তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নানান সমস্যায় জর্জরিত প্রতিষ্ঠানটি। নেই পর্যাপ্ত জনবল, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও গাছ নিয়ে গবেষণার জন্য যে পরিমান জমির প্রয়োজন সে তুলনায় জমি রয়েছে অতি সামান্য।
পুরাতন যন্ত্রপাতি দিয়ে চলছে গবেষণা এবং শুরু থেকেই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিয়েই চলছে এর কাজ। ফসলের রোগ বালাই নিয়ে কৃষকরা সমস্যায় পড়লে নমুনা সংগ্রহ করে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটে পাঠিয়ে এর সমাধানের জন্য অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘদিন।
সময়মতো পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে দিন দিন গবেষণা কেন্দ্র থেকে বিমুখ হচ্ছেন এ এলাকার কৃষকরা। অথচ চাঁপাইনবাবগঞ্জের সুমিষ্ট আম দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে রফতানির পরিমাণ। আম সংরক্ষণের ব্যবস্থা এবং এটি পূর্ণাঙ্গ গবেষনা কেন্দ্রে পরিণত হলে জেলার সঙ্গে দেশও উপকৃত হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব ও গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হামিম রেজা জানান, এখানে মূলত আম নিয়ে গবেষণা করা হয়। এর পাশাপাশি বেল, ডালিম, বরই ও আতার জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে গবেষণা চলছে। যেহেতু এটা আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব তাই এখানে সব ধরনের ফল, ফুল ও সবজি নিয়ে গবেষণা করা সম্ভব। কিন্তু গবেষণার জন্য যে পরিমাণ জমির প্রয়োজন তা নেই। মাত্র ৩০ একর জায়গা নিয়ে চলছে আমসহ কয়েকটি ফলের গবেষণার কাজ। এরমধ্যে থেকে ২ বিঘা জমি নিয়ে বরেন্দ্র অফিস তৈরি হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানীসহ প্রথম শ্রেণির ১৬টি পদে রয়েছে মাত্র ৭ জন। গবেষকদের সহযোগী মাঠ কর্মী ৪ জনের বিপরীতে রয়েছে ২ জন। অথচও মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা ১৯ জন। তৃতীয় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীও নেই বরাদ্দ অনুসারে। নেই কীটতত্ত্ব বিভাগের কোনো বিজ্ঞানী। জরুরী প্রয়োজনে দারস্থ হতে হয় লাক্ষা গবেষণার কীটতত্ত্ববিদদের।
গবেষণাগারে আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকার কারণে ফসলে রোগ বালাই বা পোকার আক্রমণ হলে নমুনা সংগ্রহ জয়দেবপুর কৃষি গবেষণায় পাঠতে হয়। সেখান থেকে এর সমাধান আসতে সময় লাগে বেশ কিছুদিন। সেকারণে কৃষকরা পরামর্শ বা সহযোগিতার জন্য গবেষণা কেন্দ্রে আসতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এখানে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও জনবল থাকলে স্বল্প সময়ে ওইসব রোগ বালায়ের সমাধান দেয়া যেত এবং কৃষকরাও উপকৃত হত। এছাড়াও মাটি ও সার পরীক্ষার জন্য নেই কোনো বিজ্ঞানী।
আম সংরক্ষণে ৩০ বছরেও প্রতিষ্ঠা করা হয়নি কোনো ল্যাব। বার বার তাগিদ দেবার পরেও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সরবরাহ করছেন না কর্তৃপক্ষ।
তিনি জানান, এখানে মূলত আম নিয়েই গবেষণা করা হয়। তাই আম গাছের ছায়ার জন্য অন্যান্য ফল, সবজি ও ফুল নিয়ে গবেষনা করা যাচ্ছে না। চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাটি ঊর্বর। তাই পর্যাপ্ত জমি, গবেষণার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ ল্যাব ও জনবল পেলে এখানে আমের পাশাপাশি অন্যান্য ফল, ফুল ও সবজি নিয়ে গবেষণা করা যাবে। এতে করে এ এলাকায় উন্নত জাতের এবং মানসম্মত ফল, ফুল ও সবজি উৎপন্ন হবে। যা এ জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে পাঠানো যাবে।
এমএএস/পিআর