স্বপ্নের মেরিন ড্রাইভ খুলছে ৬ মে
পর্যটন শিল্পের নতুন দুয়ার হিসেবে বিবেচ্য কক্সবাজার শহরের কলাতলী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়কটি। দীর্ঘ দেড় যুগের প্রচেষ্টায় সম্পন্ন হওয়ার পথে রয়েছে সড়কের কাজ।
তাই পাহাড়-সমুদ্রের মিতালির মাঝে ঝাউয়ের ছায়ায় বয়ে চলা সড়কটি আনুষ্ঠানিক উন্মুক্ত করতে ৬ মে কক্সবাজার যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মেরিন ড্রাইভ উন্মুক্তকরণের মাধ্যমে সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের সাবরাংয়ে বাস্তবায়নের অধীন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ আরও একধাপ এগোবে। তাই শেষ মুহূর্তে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল নির্মাণ ব্যাটালিয়ন ১৬ ইসিবি। কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বলেন, কক্সবাজারবাসীর স্বপ্নের মেরিন ড্রাইভ সড়কটি প্রথমে জেলা শহর থেকে উখিয়া উপজেলার ইনানী পর্যন্ত নির্মাণ করার পরিকল্পনা ছিল। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক ইচ্ছায় এটি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এখন সড়কটি শুধু কক্সবাজার বা গোটা দেশের নয় বরং বিশ্বের অন্যতম দর্শনীয় ও নান্দনিক একটি সড়কে পরিণত হয়েছে।
কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে তৎকালীন সরকারের সময়ে ৪৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ প্রকল্প গৃহীত হয়। তখন প্রকল্পের প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। এ সময় সড়ক ও জনপদ বিভাগ কক্সবাজার কলাতলী পয়েন্ট থেকে সড়ক নির্মাণকাজ শুরু করে। সওজ বিভাগের ঠিকাদার নির্মিত কলাতলী মোড় থেকে পাইওনিয়ার হ্যাচারি পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সড়ক সাগরের প্রবল ঢেউয়ের ধাক্কা সামলাতে না পেরে সাগরে বিলীন হয়ে যায়।
পরবর্তীতে মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয় সেনাবাহিনীর প্রকৌশল নির্মাণ ব্যাটালিয়নকে। বর্তমানে সড়কটি ৪৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য থেকে বেড়ে ৮০ কিলোমিটারে উন্নীত করা হয়েছে। ২০১৪ সালের জুলাই থেকে নব উদ্যোমে কাজ শুরু করে সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
এদিকে, কাজের গুণগতমান বৃদ্ধির লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগের সদস্যরা মূল সড়ককে তিন ধাপে ভাগ করছেন। প্রথম ধাপে কলাতলী থেকে ইনানী পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার, দ্বিতীয় ধাপে ইনানী থেকে শিলখালী পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার ও তৃতীয় ধাপে শীলখালী থেকে টেকনাফের সাবরাং পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার সড়ক। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের কাজ সম্পন্ন হলেও তৃতীয় ধাপের কাজ জুন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।
সওজ বিভাগ সূত্র জানায়, দৈর্ঘ্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যয়ও বেড়েছে সড়ক নির্মাণে। এখন ৪৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দে মেরিন ড্রাইভ সড়কের দুই পাশে থাকছে ওয়াক ওয়ে, পর্যটকদের সুবিধার্থে থাকবে সড়ক জুড়ে ফ্রেক্সিবল পেভম্যান, শেড, গাড়ি পার্কিং ও নারী পর্যটকদের চেঞ্জিং রুম। ৮০ কিলোমিটার সড়কজুড়ে থাকছে তিনটি বড় আরসিসি সেতু, ৪২টি কালভার্ট, ৩ হাজার মিটার সসার ড্রেন ও ৫০ হাজার মিটার সিসি ব্লক ও জিও ট্যাক্সটাইল।
মূল প্রকল্পের কাজ প্রায় সম্পন্ন হওয়ার পথে রয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রানা প্রিয় বড়ুয়া।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য রাশেদুল ইসলাম বলেন, সড়কটি শুধু উখিয়া-টেকনাফের মানুষের নয় পুরো জেলার পর্যটন সংশ্লিষ্টদের জীবন-যাত্রার মান বদলে দেবে। পিছিয়ে থাকা এই জনপদ সমৃদ্ধ হবে অর্থনৈতিকভাবে। পুরো দেশের পর্যটনের বিকাশের ক্ষেত্রে এই সড়ক খুলে দিয়েছে নতুন সম্ভাবনার দ্বার।
সায়ীদ আলমগীর/এএম/পিআর