পানির নিচে পচছে পাকা ধান, কাঁদছে কৃষক


প্রকাশিত: ১২:৫৩ পিএম, ২৪ এপ্রিল ২০১৭

হবিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গত কয়েকদিনের অবিরাম ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে জেলার ভাটি এলাকার অবশিষ্ট বোরো ফসলও তলিয়ে গেছে। যে সময়ে কৃষক নতুন ফসল ঘরে তোলায় ব্যস্ত থাকার কথা সেসময় চোখের সামনে দিয়ে বানের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে কাচা পাকা ফসল।

ভারী বৃষ্টি আর উজানের ঢলে বাঁধ ভেঙে হাওরের লাখ লাখ একর জমির বোরো ধানসহ ফসলি জমি তলিয়ে গেছে গত কয়েক দিনে। পানি বৃদ্ধি এখনো অব্যাহত আছে। নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে বোরো খেত। এর মধ্যে প্রথম দিকে তলিয়ে যাওয়া খেতের ধান পচতে শুরু করেছে পানির নিচে। পাকা ধানের এভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়া দেখে কাঁদছে কৃষক।

গত ৪৮ ঘণ্টায় জেলার খোয়াই, কুশিয়ারা, কালনী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিভিন্নস্থানে বাঁধ উপচে পানি ঢুকে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ প্লাবিত হয়। ফলে কৃষকের ঘরের গোলা শূন্য হয়ে খাদ্যাভাব দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত রোববার সকাল ৯টা থেকে খোয়াই ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে ফসলের ক্ষতি হয়।

Habigonj

সম্প্রতি অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বানিয়াচং, লাখাই ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলার হাওর।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে জেলার ৮টি উপজেলায় মোট ১ লাখ ১৬ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছিল। এপ্রিলের শুরুতে ভারী বৃষ্টিপাতে জেলার হাওর এলাকার আবাদকৃত প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে যায়। বাকি জমি কিছুটা রক্ষা পেলেও গত ৪ দিনের অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তাও শেষ রক্ষা হয়নি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তাওহীদুল ইসলাম বলেন, সোমবার সকাল থেকে জেলার খোয়াই নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও আজমিরীগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে রয়েছে।

তিনি বলেন, চলতি মাসের বৃষ্টিপাত গত ১৬ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। পুরো এপ্রিল মাসে যেখানে ২২২ মি.লি. বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা সেখানে গত ৪ দিনেই (বৃহস্পতিবার-রোববার) সে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়। অতি বর্ষণের ফলে নদ নদীগুলোর বাঁধ উপচে প্রবল বেগে পানি প্রবাহিত হওয়ায় বোরো ফসল বিনষ্ট হচ্ছে।

লাখাইয়ে সোমবার দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত হাওর পরিদর্শনে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলমগীর হুছাইন, উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. ইসমাইল তালুকদার, বুল্লা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মুক্তার হোসেন বেনু।

Habigonj

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলমগীর হুছাইন জানান, ইতোমধ্যে ৩৫ মেট্রিক টন চাল ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে বিতরণ করেছেন তারা। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ৭ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে মাসে ৩০ কেজি চাল ও ৫০০ টাকা করে দেয়া হবে। যদিও উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ১৬ হাজার। বাকিদের টিআর এর চাল দেয়া হবে।

অপরদিকে, কালবৈশাখীর ঝড়ে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার নিজামপুর, বানিয়াচং উপজেলার দৌলতপুর বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট ইউনিয়নের ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ও আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ সূত্র জানায়, নিজামপুরে ৫৮টি সম্পূর্ণ, ১৬৬টি আংশিক, স্নানঘাটে ১০০টি সম্পূর্ণ ও ১০০টি আংশিক ও দৌলতপুরে ৪৬টি সম্পূর্ণ ও ৫১টি আংশিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়।

এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ২০৩ টন চাল, খয়রাতি বাবদ নগদ ৭ লাখ ৫২ হাজার টাকা ও ৩ লাখ ৫৪ হাজার টাকা গৃহ নির্মাণ মঞ্জুরি হিসেবে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ১১৮ বান্ডিল টিন বিতরণ করা হয়।

সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এএম/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।