হাওরপাড়ে আরও বিপদ


প্রকাশিত: ০৫:৫৫ এএম, ২৩ এপ্রিল ২০১৭

টানা ২৫ দিন নির্ঘুম রাত পার করে পালাক্রমে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ রক্ষার কাজ করেও শেষ রক্ষা হলো না শনির হাওরের ঝালখালি (লালুয়ার গোয়ালা) বাঁধটির। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওই বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ হাওরপাড়ের কৃষকরা।

শনিবার দিবাগত মধ্যরাত থেকেই হাওরের ঝালখালি (লালুয়ার গোয়ালা) বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। তবুও শেষ চেষ্টা চালিয়ে যান হাজারো কৃষক। রাতভর প্রাণপণ চেষ্টায় আশার আলো শেষ পর্যন্ত নিভেই গেল, তলিয়ে গেল হাওরের ১৮ হাজার হেক্টর বোরো ফসল।

জানা যায়, সুনামগঞ্জের সবকটি হাওর তলিয়ে গেলেও তাহিরপুর উপজেলার সর্ববৃহৎ শনির হাওরটি কৃষকদের স্বেচ্ছাশ্রমে এতোদিন টিকেছিল।

উল্লেখ্য, এ হাওরে তিন (তাহিরপুর-জামালগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর) উপজেলার কৃষকরা প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে প্রতিবছর বোরা ফসল চাষাবাদ করেন।

হাওরপাড়ের মধ্য তাহিরপুর গ্রামের খেলু মিয়া বলেন, ১০ কিয়ার (৩০ শতাংশে এক কিয়ার) জমি রোপন করেছিলাম। এক টুকরো ধানও কাটতে পারিনি। পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন কিভাবে বাঁচবো ভেবে পাচ্ছি না।

উজান তাহিরপুর গ্রামের আবুল কালাম বলেন, দুই হাল জমি চাষ করেছিলাম। অনেক আগেই বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।

তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য মধ্য তাহিরপুর গ্রামের বাসিন্দা মতিউর রহমান মতি বলেন, এক হাল জমি চাষ করেছিলাম। এক কিয়ারের মতো খেতের ধান কাটা হয়েছে। বাকি সব তলিয়ে গেছে।

এ বিষয়ে তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, গত ২৫ দিন ধরে কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে হাওরের বাঁধগুলোতে রাত জেগে পালাক্রমে মাটি ভরাটের কাজ করে আসছিলাম। স্বেচ্ছাশ্রমেই এতদিন হাওরের সবকটি বাঁধ রক্ষা করেছিলাম। কিন্তু শনিবার মধ্যরাতে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় শেষ রক্ষা করা গেল না।

Haor

এর আগে অকাল বন্যায় ধান পচে সৃষ্ট গ্যাসে সুনামগঞ্জের হাওরগুলোতে ৫০ মেট্রিক টন মাছ মরে গেছে বলে জানান মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সৈয়দ মেহেদী হাসান।

জেলার মাটিয়ান হাওর, শনির হাওর, করচার হাওর ও টাঙ্গুয়ার হাওর পরিদর্শন শেষে শুক্রবার সন্ধ্যায় সার্কিট হাউজে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের এ তথ্য দেন তিনি।

এছাড়া গত তিনদিনে বারহাট্টা আটপাড়া, কেন্দুয়া, নেত্রকোনা সদর ও পূর্বধলা উপজেলার পায় ৫ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে সরকারি হিসাবে এর পরিমাণ প্রায় ৭ হাজার হেক্টর। সব মিলে জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত বোরো জমির পরিমাণ হচ্ছে ৫৪ হাজার হেক্টর।

এদিকে ভয়ে আতঙ্কে উজানের উঁচু এলাকার কৃষকরা বিনষ্ট হবার আশঙ্কায় আধাপাকা ধানও কেটে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, চলতি মৌসুমে ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে ও কোথাও কোথাও বাঁধ না হওয়ায় একের পর এক হাওর তলিয়ে যাওয়ার পর জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার লাখ লাখ বোরো চাষি সর্বশান্ত হয়ে যায়। জেলাজুড়ে বিভিন্ন ব্যক্তি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, কৃষক সংগঠন ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানান।

রাজু আহমেদ রমজান/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।