হারিয়ে গেছে ঐতিহ্য, দখল হয়েছে জমি
কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে জমিদারি প্রথা। অন্যদিকে সরকারি রক্ষণাবেক্ষণ আর উদ্যোগের অভাবে জমিদারের রেখে যাওয়া ঘরবাড়িসহ শত শত বিঘা জমি চলে গেছে অবৈধ দখলে। এসব সংরক্ষণ করতে পারলে সেগুলো হতে পারতো নতুন প্রজন্মের দর্শনীয় স্থান।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার গোপালপুর এলাকায় তৎকালীন জমিদার অবলা কান্ত ঘোষ। তার তিন ভাই বলয় ঘোষ, রবি ঘোষ ও উৎপল ঘোষ। বাবা সুরেন ঘোষ ছিলেন সেসময়কার খুলনা জেলার চেয়ারম্যান। প্রভাবশালী এ পরিবারটি দেড়শ বছর আগে কোনো এক সময় তালার গোপালপুর এলাকায় এসে গড়ে তোলেন জমিদারি। এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য থাকা সুরেন ঘোষ প্রায় ৯০ বিঘা জমির উপর নির্মাণ করেন বসত ভিটা।
প্রায় একযুগ পর জমিদার সুরেন ঘোষের মৃত্যুর পর বড় ছেলে অবলা ঘোষ জমিদার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাদের প্রভাব প্রতিপত্তির কথা এখনো এলাকার বৃদ্ধ মানুষদের কাছ থেকে জানা যায়।
গোপালপুর এলাকার মৃত নিরাপদ মজুমদারের ছেলে অলোক কুমার মজুমদারের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জাগো নিউজকে এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, সব মিলিয়ে এলাকায় তাদের সাতশ বিঘা জমি ছিল। যা এখন দখল করে নিয়েছে বিভিন্ন মানুষ। কেউ কেউ জাল দলিল তৈরি করে নিজের জমি বলে দাবি করেন। জমিদারের বাড়িটাও এখন অবৈধ দখলে চলে গেছে। শোনা যায় দুটি পরিবার সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নিয়ে সেখানে বসবাস করে।
জমিদারি শেষ হলো কবে থেকে এমন প্রশ্নে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় হঠাৎ রাতের আধারে পরিবার পরিজন নিয়ে জমিদার অবলা কান্ত দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। তারপর থেকে কেউ আর এখানে ফিরে আসেননি। এরপর থেকে ধীরে ধীরে সব দখল করে নিয়েছে বিভিন্ন মানুষ। তবে জমিদার অবলা কান্ত ঘোষের দেশছাড়ার সঠিক কারণ জানাতে পারেননি তিনি।
জমিদার অবলা কান্ত ঘোষ বসতভিটার পাশে তালা-পাটকেলঘাটা সড়কের রাস্তার পাশে গড়ে তোলেন সুবিশাল একটি আম বাগান। যা বাবুর আম বাগান নামেই খ্যাতি লাভ করে। ২০১০ সাল পর্যন্ত আম বাগানটি মাথা উচু করে থাকলেও ২০১১ সালের ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে মারা যায় শতাধিক গাছ। বর্তমানে জমিদারের বাড়িসহ বাড়ির পার্শ্ববর্তী সব এলাকা চলে গেছে বিভিন্ন মানুষের অবৈধ দখলে। তবে এলাকাবাসী অবৈধ এসব দখল উচ্ছেদ করে জমিদারের বাড়িটি সংরক্ষণ করে একটি পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে অবগত রয়েছেন জানিয়ে জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দীন জাগো নিউজকে জানান, তালাবাসীর বিনোদনের জন্য তেমন কোনো স্থান নেই। আম বাগানটি একটি বিনোদন কেন্দ্র ও জমিদার বাড়িটি সংরক্ষণ করে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়টি ভাবনায় রয়েছে।
এদিকে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, তৎকালীন জমিদারের সহায় সম্পত্তি উদ্ধারের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। তাছাড়া আম বাগানটি বিনোদন স্পট হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
আকরামুল ইসলাম/এফএ/জেআইএম