সিলেটে জঙ্গি রিপনের ফাঁসি কার্যকর

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৪:০৯ পিএম, ১২ এপ্রিল ২০১৭

হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার সিলেটের কৃতীসন্তান আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি দেলোয়ার হোসেন রিপনের ফাঁসি সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে কার্যকর করা হয়েছে।

বুধবার রাত ১০টা এক মিনিটে ফাঁসির রশিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয় বলে জানিয়েছেন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার ছগির মিয়া। রিপনের গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের কোনাগ্রামে।

একই সময়ে গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত হুজির শীর্ষ জঙ্গিনেতা মুফতি আবদুল হান্নান ও তার অপর সহযোগী শরীফ শাহেদুল ওরফে বিপুলকে ফাঁসির রশিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কর্যকর করা হয়েছে। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের কর্মকর্তারা জানান, জল্লাদ ফারুক ও জাহাঙ্গীর লিভার টেনে রিপনের ফাঁসি নিশ্চিত করেন।

ফাঁসি কার্যকরের সময় সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. রাহাত আনোয়ার, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) এসএম সাহেদুল ইসলাম, সিভিন সার্জন, কারাগারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ফাঁসির পর রিপনের ময়নাতদন্ত করেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক অমল রতন সাহা ও সিভিল সার্জন অফিসের চিকিৎসকরা। ফাঁসি কার্যকর উপলক্ষে গতকাল দুপুর থেকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার ও এর আশপাশ এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।

সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে দুটি মাইক্রোবাস ও একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে হুজির শীর্ষ জঙ্গিদের অন্যতম দেলোয়ার হোসেন রিপনের বাবা-মা ও স্ত্রীসহ প্রায় ২৫ জন শেষ দেখা করতে কুলাউড়া থেকে কারাগারে আসেন।

এক ঘণ্টা ৩৬ মিনিট কারাগারে অবস্থানের পর রাত ৮টা ২৬ মিনিটে তারা বেরিয়ে যান। যাওয়ার সময় রিপনের স্ত্রী ও মা কান্নাকাটি করতে দেখো গেছে। তবে তারা কারাফটকে থাকা সাংবাদিকদের সাথে কোনো কথা বলেননি। দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে তারা কারাগার এলাকা ত্যাগ করেন।

স্বজনরা বেরিয়ে যাওয়ার পর রিপনকে তওবা পড়ান সিলেট নগরের আবু তোরাব মসজিদের ইমাম মাওলানা মুফতি মো.বেলাল উদ্দিন। এর আগে তাকে গোসল করানো হয়। তওবা পড়ানোর পর মুফতি মো. বেলাল উদ্দিন রাত ৯টা ২৮ মিনিটে কারাগার থেকে বেরিয়ে যান।

এর আগে বুধবার দুপুরে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. আবু সায়েম জানিয়েছিলেন, ফারুক আহমদ ও জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি জল­াদ দল রিপনের ফাঁসি কার্যকর করবে।

গত মঙ্গলবার সকালে রাষ্ট্রপতির কাছে করা রিপনের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ সংক্রান্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে।

এরপর তা রিপনকে পড়ে শোনানো হয়। ওইদিন (গত মঙ্গলবার) দুপুরে কারাগারে এসে রিপনের সাথে সাক্ষাৎ করেন তার বাবা আ. ইউসুফ, মা আজিজুন্নেছা, ভাই নাজমুল ইসলাম ও তার স্ত্রী। বুধবার সন্ধ্যায় তারা আবার শেষবারের মতো সাক্ষাৎ করেন।

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হজরত শাহজালালের মাজার প্রাঙ্গণে ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন পুলিশের এএসআই কামাল উদ্দিন।

এছাড়া হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান রুবেল আহমেদ ও হাবিল মিয়া। এ ঘটনায় আহত হন আনোয়ার চৌধুরী ও সিলেটের তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবুল হোসেনসহ অন্তত ৪০ জন।

আলোচিত এ মামলার রায়ে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের রায়ে হরকাতুল জিহাদের প্রধান মুফতি হান্নান, সাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন রিপনের ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেয়া হয়। এই রায় আপিলেও বহাল থাকে।

আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামি রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন। তাদের আবেদন গত ১৯ মার্চ সর্বোচ্চ আদালতে খারিজ হয়ে যায়।

এরপর এই তিন আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে নিজেদের জঙ্গি স্বীকার করে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি তাদের আবেদন নাকচ করে দেন।

ছামির মাহমুদ/এএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।