৩৪ বছরেও কাজে লাগেনি পাইকগাছার জেলখানা
খুলনায় থেকে দূরত্বের বিবেচনায় পাইকগাছা উপজেলায় ৩৪ বছর আগে সোয়া দুই একর জমির উপর নির্মাণ করা হয় জেলখানা। কিন্তু সেই জেলখানা আজও আলোর মুখ দেখেনি।
তদারকির অভাবে পাইকগাছা আদালতের পাশে জেলখানার জন্য নির্মিত উচ্চ প্রাচীর বেষ্টিত ভবনসহ সম্পদ-সম্পত্তি এখন বারো ভূতে লুটেপুটে খাচ্ছে। এখানে সরকার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নিলেও ৩৪ বছরের মধ্যে কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি। আয়ের বিভিন্ন খাত থাকলেও রাজস্ব খাতে জমা পড়েনি কোনো অর্থ।
সূত্রে জানা যায়, খুলনা জেলা সদর থেকে পাইকগাছার দূরত্ব ৬৫ কিলোমিটার এবং জেলখানার গুরুত্ব ভেবে সরকার পাইকগাছায় জেলখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৪ সালের ২৯ মে পাইকগাছা সদরে বাতিখালী মৌজায় এর জন্য ২.২৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে। অধিগ্রহণের ১৩ বছর ধরে জেলখানার জন্য চারিদিকে প্রাচীর নির্মাণ করলেও তা যথেচ্ছা ব্যবহার হচ্ছে না।
২০০৩ সালে ১০ মে কিশোর অপরাধীর জন্য সরকারি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২১১ স্মারকে মহাপরিচালক, সমাজসেবা অধিদফতরের কাছে জায়গাটি হস্তান্তর করে। যা উপজেলা সমাজসেবা অধিদফতর ২০০৫ সালের ৫ জানুয়ারি ২৩৬/৫৬/০৫ স্মারকে দায়িত্ব গ্রহণ করে। কিন্তু সেটাও বাস্তব রূপ নেয়নি।
পরবর্তীতে সরকার ২০১৩ সালের ৬ মে শেখ রাসেল ট্রেনিং অ্যান্ড রিহেবিলিটেশন সেন্টার ফর দ্যা ডেস্টিটিউট চিল্ড্রেন প্রকল্প প্রণয়নের জন্য পরিচালক প্রশাসন ও অর্থ প্রস্তাব চেয়ে পাঠান। সরকারের কোনো পদক্ষেপ বাস্তবে রূপ না নেয়ায় ২০১২ সালের ২২ জুলাই ৮২৮ স্মারকে সিনিয়র সহকারী কমিশনার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে পত্র পাঠায়।
যার জবাবে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর ৮৩৪ স্মারকে সাব-জেল চালু করার জন্য পত্র প্রেরণ করেন। অদ্যাবধি সেটাও আলোর মুখ দেখেনি। বার বার সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা নিলেও কোনো পদক্ষেপ অদ্যাবধি কার্যকর হয়নি। বরং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন স্মারকে চিঠি চালাচালি হয়েছে বার বার।
এদিকে উক্ত সম্পত্তি ও ভবনসহ সবকিছুই ২০০৪ সাল থেকে দেখভাল করে চলেছে সরল গ্রামের নৈমুদ্দীন গাজীর ছেলে আবুল শেখ। সেখান থেকে উৎপাদিত ফসলসহ সব কিছু তিনি ভোগজাত করছেন। জেলখানার জন্য নির্মিত ৩টি কোয়ার্টার, ৪টি বড় কক্ষে বিনা ভাড়ায় স্থানীয় জজ কোর্টের কর্মচারী ও সমাজসেবা অধিদফতরের ১০/১২ জন কর্মচারী বসবাস করছে। যেখান থেকে সরকারের বছরে লক্ষ লক্ষ টাকা আয়ের সম্ভাবনা থাকলেও রাজস্ব খাতে জমা হয়নি একটি টাকাও।
এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাড. স ম বাবর আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাস্তবে ওটা দেখার কেউ নেই। সরকার কেন এবং কী জন্য এটা দেখাশুনা করছেন না সেটা আমার বোধগম্য নয়।
আলমগীর হান্নান/এফএ/জেআইএম