ছোটদের বড় নির্বাচন!
আয়োজনটা ছিল বিশাল, কিন্তু নির্বাচনটা ছিল ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের। আয়োজনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার, প্রিসাইজিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার, পুলিশ, আনসার হিসেবে যারা ছিলেন তাদের সবাই ছিল শিক্ষার্থী।
ভোটার ও প্রার্থীরাও শিক্ষার্থী। ছিল ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্স, অমোচনীয় কালি, ভোট দেয়ার গোপন কক্ষ। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছিল দীর্ঘ লাইন। কিন্তু ছিল না ব্যালট পেপার-বাক্স ছিনতাইয়ের মতো কোনো ঘটনা।
কুমিল্লায় শনিবার অনুষ্ঠিত স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের এমনই ব্যতিক্রমী নির্বাচনী পরিবেশটা ছিল অনেকটা জাতীয় নির্বাচনের ন্যায়।
সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত জেলার সদর ও সদর দক্ষিণ উপজেলার ৭৬টি বিদ্যালয় ও মাদরাসায় এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ভোটার ছিল সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। নির্বাচন দেখতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ঢাকা থেকে ছুটে এসেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা।
জানা যায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শতভাগ ভর্তি ও ঝরে পড়া রোধে সহযোগিতা করা, শিখন-শেখানো কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে অভিভাবকদের সম্পৃক্ত করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ উন্নয়ন, ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও সহশিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ২০১৫ সাল থেকে আংশিকভাবে দেশের মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্টুডেন্ট কেবিনেট চালু হয়।
পরবর্তীতে তা দেশব্যাপী বিস্তার ও সফলতা লাভের পর চলতি বছর থেকে দেশের সকল মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও দাখিল মাদরাসায় স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
শনিবার কুমিল্লার সদর উপজেলার ৬৩টি এবং সদর দক্ষিণ উপজেলার ১৩টি স্কুল ও মাদরাসায় শান্তিপূর্ণভাবে ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৫১ হাজার ৫৪০ জন। এর মধ্যে ২৯ হাজার ৩০৭ জন ছাত্রী এবং ২২ হাজার ২৩৩ জন ছাত্র। ৬ষ্ঠ থেকে ১০ শ্রেণি পর্যন্ত ৫ ক্লাসে ৫ জন এবং সর্বাধিক ভোটের যে কোনো শ্রেণি থেকে আরও তিনজন নির্বাচিত করার জন্য শিক্ষার্থী গোপন বুথে গিয়ে ব্যালটের মাধ্যমে আটজন জনকে ভোট দেয়।
বিকেল সাড়ে ৪টার পর থেকে ঘোষণা করা হয় ফলাফল। নগরীর নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, রেলওয়ে পাবলিক উচ্চবিদ্যালয় ও মডার্ন হাই স্কুল ঘুরে দেখা গেছে ক্ষুদে ভোটাররা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছে।
ভোটগ্রহণের জন্য প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং, পোলিং, পুলিশ, আনসার নিয়োজিত ছিল। এদের সবাই ছিল শিক্ষার্থী। জাল ভোটের জন্য জরিমানা ও হাজত খানার ব্যবস্থাও ছিল। এসব কাজে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা।
এছাড়া নির্বাচন মনিটরিং করেছেন জেলা শিক্ষা অফিস, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস। এদিকে ভোটগ্রহণের সময় পরিবেশ শান্ত থাকলেও দুপুরের পর থেকে বিকেল পর্যন্ত ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে রাখে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস ও এর আশ পাশের এলাকা।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. ইকবাল হাসান বলেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের এ ভোট দেয়ার পদ্ধতি সত্যিই বিস্ময়ের ব্যাপার। এছাড়া ভোটের পর ফলাফলের জন্য বিকেল পর্যন্ত আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করাও আমাদের মুগ্ধ করেছে।
জেলা শিক্ষা অফিসার আবদুল মজিদ বলেন, সকাল থেকে আমরা নগরীর কয়েকটি বিদ্যালয় ঘুরে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মাঝে গণতন্ত্রের চর্চা, গণতান্ত্রিত মূল্যবোধ ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে দেখেছি।
তিনি আরও বলেন, ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মাঝে এ নির্বাচনী প্রক্রিয়া দেখতে ঢাকা থেকে কুমিল্লায় ছুটে এসেছেন ব্যানবেইসের পরিচালক মো. ফসিউল্লাহ। তিনিও স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচন দেখতে গিয়ে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে তাদের প্রশংসা করেছেন।
মো. কামাল উদ্দিন/এএম/জেআইএম