বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ভাঙছে কৃষকের স্বপ্ন


প্রকাশিত: ০৪:০৯ এএম, ০৬ এপ্রিল ২০১৭

ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ১৩৩টি হাওরের বোরো ফসল হুমকির মুখে পড়েছে। গত কয়েক দিনে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্মিত বাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে জেলার ৭ উপজেলার ছোট-বড় ১০টি হাওরের প্রায় তিন হাজার হেক্টর বোরো জমির ধান তলিয়ে গেছে। অন্যদিকে ঝুঁকিতে রয়েছে অন্যান্য হাওরের ফসল। এ অবস্থায় বুকফাটা আহাজারিতে ভেঙে যাচ্ছে কৃষকদের রঙিন স্বপ্ন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কার্যালয় সূত্রের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, বিশম্ভরপুর, ধর্মপাশা ও দিরাই উপজেলার ৫টি হাওরের প্রায় ১৭শ হেক্টর বোরো ফসলি জমির ধান তলিয়ে গেছে। যার আর্থিক ক্ষতি প্রায় দুই কোটি টাকা।

জানা গেছে, ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনার তাল, ডুবাইল, পাশোয়া, গুরমা ও মেঘনা হাওরের প্রায় ১৫০০ হেক্টর এবং বিশম্ভরপুর উপজেলার সোনাতলা কাইক্কার দাইর হাওরের ২০০ হেক্টর, তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের শামসাগর, নান্দিয়ার বিল, সোনাডুবি ও গন্নিয়াকুড়ি বিলের অন্তত এক হাজার হেক্টর জমির ধান বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে।

sunamganj

অন্যদিকে দিরাই উপজেলার বরাম হাওরের তুফানখালি বাঁধ ভেঙে শুক্রবার থেকে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। স্থানীয় কৃষকরা বাঁধ রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই হাওরে তিন হাজার ২০ হেক্টর জমি রয়েছে। এছাড়া তাহিরপুর উপজেলার শনি ও মাটিয়াইন হাওর, জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়া ও মইয়ার হাওর, ধর্মপাশা উপজেলার টগার হাওর, বোয়ালিয়া, শালদিঘা, ফুল দোয়ারি, বাইনটাপড়া, কাইল্যানি বিশম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওর, সুনামগঞ্জ সদর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার দেখার হাওর জামালগঞ্জ উপজেলার পাগনার হাওর, হালির হাওরসহ অন্তত ৩৫টি হাওরে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ করছে।

অভিজ্ঞ মহল বলছেন, হাওরাঞ্চলের নদ-নদীর তলদেশ পাহাড়ি ঢলে বালির আগ্রাসনে ভরাটের ফলে পানির রিজার্ভার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বছরের পর বছর ফসলহানি ঘটে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড জেলার ৪৮টি হাওরের বোরো ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ মেরামত, সংস্কার ও নতুন বাঁধ নির্মাণে ৫৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ পায়। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু হওয়ার নির্দেশনা থাকলেও ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হয়েছিল। কোথাও কোথাও বাঁধের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি আবার কোথাও কাজ সবেমাত্র শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

sunamganj

এ প্রসঙ্গে বিশম্ভরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ বলেন, খরচার হাওরের সবুজ ধানের মাঠের বিরাট অংশ বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে, অপরদিকে হাওর রক্ষা বাঁধের ডেঞ্জার পয়েন্ট (হরিমনের কারা) এখনও অসম্পূর্ণ রয়েছে। কিছু অংশে এখনও প্রাথমিক কাজটুকুও হয়নি। ফসলরক্ষায় যেকোনো পদ্ধতিতে দ্রুত মাটির কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্টরা এগিয়ে আসবেন এমন দাবি এই জনপ্রতিনিধির।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক জাহেদুল হক জানান, পাহাড়ি ঢল ও অব্যাহত ভারি বর্ষণে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মৌসুমের শুরুতেই ঝুঁকিতে পড়েছে হাওরাঞ্চলের বোরোখেত।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন বলেন, অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হাওরের কাচা ফসল তলিয়ে যাচ্ছে। দোয়ারাবাজার উপজেলায় একটি বাঁধ দুষ্কৃতকারীরা কেটে দেয়ায় ওই হাওরে দ্রুত পানি প্রবেশ করছে। এতে হুমকিতে রয়েছে সেখানকার ফসল।

sunamganj

জেলা প্রশাসক (যুগ্ম সচিব) শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, টানা বৃষ্টিপাতে সকল নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকছে। সময়মতো বাঁধ নির্মাণ না করা ও বাঁধ নির্মাণে পিআইসিদের চাহিদামতো বরাদ্দ না দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।জেলার সকল হাওরের ফসল রক্ষায় দিনরাত চেষ্টা করছি। সকল ইউএনওদের বাঁধে কঠোর নজরদারি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এফএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।