মডেল রাউধার আত্মহত্যা : রাজশাহীতে মালদ্বীপের পুলিশ


প্রকাশিত: ০৩:০৩ পিএম, ০৩ এপ্রিল ২০১৭

মালদ্বীপের মডেল কন্যা রাউধা আথিফের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে রাজশাহীতে এসেছেন মালদ্বীপের দুই পুলিশ কর্মকর্তা। সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজশাহীতে পৌঁছান তারা।

ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন, মালদ্বীপ পুলিশের সিনিয়র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রিয়াজ ও পরিদর্শক আহমদ আলী।

জানা গেছে, মালদ্বীপ পুলিশের ওই দুই কর্মকর্তা রাজশাহীর হযরত শাহমখদুম (রহ.) বিমানবন্দরে এসে পৌঁছালে তাদের স্বাগত জানান নগরীর শাহমখদুম থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিল্লুর রহমান ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক রাশিদুল ইসলাম। এদের মধ্যে ডিবি পরিদর্শক রাশিদুল ইসলাম রাউধা অপমৃত্যু মামলাটি তদন্ত করছেন। পরে মালদ্বীপ পুলিশের ওই দুই কর্মকর্তা রাজশাহীর সার্কিট হাউজে গিয়ে ওঠেন।

তবে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মালদ্বীপ পুলিশের ওই দুই কর্মকর্তা দেশে এসে সরাসরি রাজশাহী মহানগর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা পুলিশ সদর দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।

রাউধার ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যুর ঘটনা ও মামলা এখানে হওয়ায় আলাদা করে তাদের তদন্ত সুযোগ নেই বলেও জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা। তবে তারা কেবল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে পারেন। এ রকম হলে নগর পুলিশ তাদের সহায়তা দেবে।

আরএমপির উপ-কমিশনার (পশ্চিম) আমীর জাফর বলেন, রাউধা অপমৃত্যু মামলা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে নগর পুলিশ। এখনো তদন্ত চলমান। হয়তো রাউধার পরিবারের ডাকে মালদ্বীপ পুলিশের ওই দুই কর্মকর্তা রাজশাহীতে এসেছেন।

এর আগে গেল বৃহস্পতিবার থেকেই রাজশাহীতে অবস্থান করছেন রাউধার বাবা মোহাম্মদ আতিফ ও মা আমিনা মহাসিমাতসহ দুই ভাই। শনিবার সকালে তারা আরেক দফা পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ছাত্রী নিবাসের যে কক্ষে রাউধা থাকতেন সেখানেও যান। তারা রাউধার সহপাঠী ও শিক্ষকদের সঙ্গেও কথা বলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের সেক্রেটারি আব্দুল আজিজ রিয়াদ বলেন, মালদ্বীপের গণমাধ্যমে রাউধার আত্মহত্যার ঘটনাটিকে ভিন্নভাবে প্রকাশ করা হয়েছে বলে শুনেছি। সে কারণে হয়তো তাদের পুলিশের একটি টিম এসেছে। তবে এনিয়ে তারা এখনো যোগাযোগ করেননি।

গত ২৯ মার্চ বেলা ১১টার দিকে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ ছাত্রী নিবাসের দ্বিতীয় তলার ২০৯ নম্বর কক্ষ থেকে রাউধা আথিফের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এনিয়ে ওই দিনই হাসপাতালের সচিব আব্দুল আজিজ রিয়াজ থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন।

খবর পেয়ে ৩০ মার্চ রাজশাহী আসেন রাউধার স্বজনসহ মালদ্বীপের প্রতিনিধি দল। পরিবারের সিদ্ধান্তে শুক্রবার দুপুরের পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল মর্গে মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়। রামেক হাসপাতাল ফরেন্সিক বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মুনসুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের দল ময়নাতদন্ত করেন। রাউধা আথিফ আত্মহত্যা করেছেন এই মর্মে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। গত শনিবার জোহর নামাজের পর নগরীর হেঁতেমখা গোরস্থানে দাফন করা হয় মরদেহ।

রাউধার বাড়ি মালদ্বীপের মালেতে। তার বাবা মোহাম্মদ আতিফ পেশায় একজন চিকিৎসক। ২০১৬ সালের ১৪ জানুয়ারি ওই কক্ষে ওঠেন এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী রাউধা।

বিখ্যাত সাময়িকী ‘ভোগ ইন্ডিয়া’ ২০১৬ সালের অক্টোবরে তাদের নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যা প্রকাশ করে। তাতে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন হয় এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মডেলদের নিয়ে। ‘বৈচিত্র্যের সৌন্দর্য উদযাপন’ (সেলিব্রেটিং বিউটি ইন ডাইভার্সিটি) শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে স্থান পেয়েছিলেন মালদ্বীপের এই মডেল।

ভোগ ইন্ডিয়ার ওই প্রতিবেদনের জন্য দেয়া সাক্ষাৎকারে রাউধা বলেছিলেন, মডেলিং আমার কাছে পেশা নয়, শখই বেশি। পড়াশোনা শেষ করে চিকিৎসক হয়ে মানুষকে সাহায্য করাই আমার স্বপ্ন।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরএআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।