মালদ্বীপের মডেল কন্যার রাউধার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন
রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মডেল রাউধা আথিফ (২০) আত্মহত্যা করেছেন। মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। শুক্রবার দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত করা হয়।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎকসদের তিন সদস্যের একটি দল ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন। দলটির প্রধান রামেক ফরেনসিক বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক মুনসুর রহমান। তিনি জানান, বেলা ১২টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে।
এরপর মরদেহ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে ময়নাতদন্তে পাওয়া প্রাথমিক তথ্য জানাতে জাননি এই চিকিৎসক।
এনিয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অন্য সদস্যরা রামেক ফরেনসিক বিভাগের আরেক সাবেক প্রধান অধ্যাপক এমদাদুল হক ও একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এনামুল হক ময়নাতদন্তে অংশ নেন।
এ বিষয়ে ডা. এনামুল হক বলেন, প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যার বাইরে কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তবে ভিসেরা প্রতিবেদনের জন্য মরদেহ থেকে কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। ভিসেরা প্রতিবেদন পেলেই রাউধার মৃত্যু নিয়ে চিকিৎসকরা পরিস্কার ধারণা দিতে পারবেন। দুই একদিনের মধ্যেই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পুলিশকে দিয়ে দেয়া হবে।
এদিকে, রাউধা আথিফের মরদেহ তার নিজ দেশ মালদ্বীপে নেয়া হবে কি-না তা এখনো জানায়নি পরিবার। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে রাউধা আথিফের বাবা মোহাম্মদ আতিফ, মা আমিনা মহাসিমাত ও তার এক ভাই রাজশাহী এসে পৌঁছান।
তাদের সঙ্গে রয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত মালদ্বীপের হাইকমিশনার আইশাদ শান শাকির ও কমনওয়েলথের দ্বিতীয় সেক্রেটারি ইসমাইল মুফিদসহ দেশটির প্রতিনিধি দল। বর্তমানে রাজশাহীর পর্যটন মোটেলে অবস্থান করছেন তারা।
নগরীর শাহমখদুম থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিল্লুর রহমান জানান, প্রথমে রাউধা আথিফের মরদেহ রাজশাহীতে দাফনের কথা বলছিল পরিবার। পরে আবার জনিয়েছে ঢাকায় নেবে। একবার বলেছে মাসখানেক রামেক হাসপাতাল হিমঘরে রাখবে। এনিয়ে এখনো পূর্ণাঙ্গ কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি তার পরিবার। সিদ্ধান্ত পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ওসি আরও বলেন, শুক্রবার দুপুরে এনিয়ে রাউধার পরিবার ও মালদ্বীপের প্রতিনিধিরা রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সেখানেও তারা তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া কিংবা দাফনের বিষয়ে কিছু জানাননি। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ মর্গ থেকে রামেক হাসপাতা হিমঘরে নেয়া হয়েছে।
ওসি জিল্লুর রহমান জানান, মডেল রাউথার মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ খুঁজছেন তারা। তবে তার ব্যবহৃত আইফোনের লক খুলছে না। আনলক করার মতো কোনো প্রযুক্তিও নেই পুলিশের কাছে। ফলে কার কার সঙ্গে তার সর্বশেষ কথা হয়েছিল, চ্যাট হয়েছিল সে তথ্য পাওয়া যাচ্ছেনা।
তবে তার সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একদিন পরই তার টিউটোরিয়াল পরীক্ষা ছিল। পড়াশোনা নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলেন তিনি। এছাড়া প্রেমঘটিত কিংবা পারিবারিক কোনো বিষয় আছে কি-না, তাও জানার চেষ্টা চলছে। মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন তারা।
গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ ছাত্রীনিবাসের দ্বিতীয় তলার ২০৯ নম্বর কক্ষ থেকে রাউধা আথিফের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রাউধার বাড়ি মালদ্বীপের মালেতে। তার বাবা মোহাম্মদ আতিফ পেশায় একজন চিকিৎসক। ২০১৬ সালের ১৪ জানুয়ারি ওই কক্ষে ওঠেন রাউধা।
পুলিশের ভাষ্য, গলায় ওড়না পেঁচানো মরদেহ সিলিং ফ্যানে ঝুলছিল। পুলিশ ও কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এনিয়ে ওই দিনই হাসপাতালের সচিব আব্দুল আজিজ রিয়াজ থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন। এনিয়ে উপাধ্যক্ষ ডা. আব্দুল মুকিত সরকারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। শনিবার তদন্ত প্রতিবেদন দেবার কথা ওই কমিটির।
বিখ্যাত সাময়িকী ‘ভোগ ইন্ডিয়া’ ২০১৬ সালের অক্টোবরে তাদের নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যা প্রকাশ করে। তাতে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন হয় এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মডেলদের নিয়ে। ‘বৈচিত্র্যের সৌন্দর্য উদ্যাপন’ (সেলিব্রেটিং বিউটি ইন ডাইভার্সিটি) শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে স্থান পেয়েছিলেন মালদ্বীপের মডেল কন্যা।
ভোগ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনের জন্য দেয়া সাক্ষাৎকারে রাউধা বলেছিলেন, মডেলিং আমার কাছে পেশা নয়, শখই বেশি। পড়াশোনা শেষ করে চিকিৎসক হয়ে মানুষকে সাহায্য করা আমার কাছে সব সময়ের জন্য স্বপ্ন।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এআরএ/পিআর