মালদ্বীপের মডেল কন্যার মরদেহ নিতে স্বজনরা রাজশাহীতে
রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মালদ্বীপের মডেল কন্যা রাউধা আথিফের (২০) মরদেহ নিতে রাজশাহীতে পৌঁছেছেন তার মা ও ভাই।
তাদের সঙ্গে রয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত মালদ্বীপের হাইকমিশনার আইশাদ শান শাকির ও কমনওয়েলথের দ্বিতীয় সেক্রেটারি ইসমাইল মুফিদসহ দেশটির প্রতিনিধি দল। বিমানযোগে বিকেলে রাজশাহী পৌঁছান তারা।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ইফতেখায়ের আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, রাজশাহীতে এসে তারা প্রথমেই ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এরপর যে কক্ষে ওই ছাত্রী থাকতেন সেই কক্ষ পরিদর্শন করেন।
তিনি আরও বলেন, তার মা আমিনা মহাসিমাত রাজশাহীতে এলেও বাবা মোহাম্মদ আতিফ এখনো পৌঁছাতে পারেননি। মাইক্রোযোগে ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন তিনি। তিনি এলেই ময়নাতদন্ত ও পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।
পরিবার রাজি হলে শুক্রবার রাউধা আথিফের মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল মর্গে। বর্তমানে মরদেহ রামেক হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে।
এদিকে রাউধার মেডিকেল কলেজে ভর্তির আবেদন ফরমে দেয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, মালদ্বীপের মালেতে তার বাড়ি। তার বাবা মোহাম্মদ আথিফ পেশায় একজন চিকিৎসক। ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।
২০১৬ সালের ১৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির ছাত্রী নিবাসের ২০৯ নম্বর কক্ষে ওঠেন। বুধবার সকালে মহিলা হোস্টেল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশের ভাষায়, গলায় ওড়না পেঁচানো মরদেহ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছিল। পুলিশ ও কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এ নিয়ে ওইদিনই হাসপাতালের সচিব আব্দুল আজিজ রিয়াজ থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন।
রাউধা আথিফের সহপাঠীরা জানিয়েছেন, রাউধা ছিলেন খুবই হাসিখুশি-প্রাণবন্ত। পড়াশোনার পাশাপাশি মডেলিংও করতেন ‘একুয়া ব্লু’ চোখের অধিকারী রাউধা।
গত দুই মাস ধরে পিয়ানো শিখছিলেন। শিখছিলেন বাংলাও। তার এভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না সহপাঠীরা।
রাজশাহী নগরীতে বসবাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রের পিয়ানো বাদক জন থর্প। তার কাছেই পিয়ানো শিকতেন রাউধা। সর্বশেষ গত ২৬ মার্চ বিকেলে পিয়ানো ক্লাসে হাজির হন তিনি। রাউথার আত্মহননের খবরে ব্যথিত জন থর্প।
তিনি বলেন, খবরটা শুনে দুঃখ পেয়েছি। ভদ্র, নম্র ও মিষ্টি একটা মেয়ে ছিল। পিয়ানোর প্রতি আগ্রহ ছিল তার। বাংলা খুব একটা বলতে পারত না, তাই বাংলাও শিখছিল। ও যে এ ধরনের কিছু করতে পারে, এমন কোনো ইঙ্গিতই পাইনি।
এদিকে, বিখ্যাত সাময়িকী ‘ভোগ ইন্ডিয়া’ ২০১৬ সালের অক্টোবরে তাদের নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যা প্রকাশ করে। তাতে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন হয় এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মডেলদের নিয়ে।
‘বৈচিত্র্যের সৌন্দর্য উদযাপন’ (সেলিব্রেটিং বিউটি ইন ডাইভার্সিটি) শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে স্থান পেয়েছিলেন মালদ্বীপের এই মডেল।
ভোগ ইন্ডিয়ার ওই প্রতিবেদনের জন্য দেয়া সাক্ষাৎকারে রাউধা বলেছিলেন, মডেলিং আমার কাছে পেশা নয়, শখই বেশি। পড়াশোনা শেষ করে চিকিৎসক হয়ে মানুষকে সাহায্য করা আমার কাছে সব সময়ের জন্য স্বপ্ন।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এএম/আরআইপি