ভোটের শহর কুমিল্লায় জঙ্গি অাতঙ্ক


প্রকাশিত: ০৪:৩২ পিএম, ২৯ মার্চ ২০১৭

গোটা শহর নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা। নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার চিত্রে পাল্টে গেছে কুমিল্লা শহর। রাত পোহালেই ভোট। ভোটের অাবহে গুঞ্জন সর্বত্রই। সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাঁচ হাজার সদস্য মোতায়েন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে। কিন্তু এমন নিরাপত্তার চাদরেও স্বস্তি মিলছে না নগরবাসীর। জঙ্গি অাতঙ্কে শঙ্কিত এখানকার ভোটাররা।

বুধবার বিকেলে শহরের মধ্যখানে জঙ্গি অাস্তানা পুলিশ ঘিরে ফেলার পরেই মানুষের মধ্যে অাতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভােটের অালোচনা অাড়ালে পড়ে যায় জঙ্গি অাস্তানার খবরে। ভোটের অাগের দিনের এমন খবরের জন্য নগরবাসী প্রস্তুত ছিল না, তা জনসাধারণের অালাপনেই মিলছে।

সন্ধ্যায় রেলগেটের পাশে ভাই ভাই হোটেলে বসে চা পান করছিলেন বেশ কয়েকজন। এক টেবিল থেকে অালাপ ওঠে ভোটের। অারেক টেবিলে অালোচনা হয় জঙ্গি নিয়ে। জঙ্গি অালোচনায় মার খেয়ে যায় ভোটের অালোচনা। অালোচনায় অংশ নেয়া একজন বলেন, ভোট দিতে যাবো কি-না, ভাবছি। শহরের মধ্যখানে জঙ্গি অাস্তানা! অবাক করেছে।

পাশে বসে থাকা অারেকজন অালোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, ভয় তো গোটা দেশ নিয়েই। মৌলভীবাজারেও নাকি জঙ্গি অাস্তানায় অপারেশন চলছে। কী যে হলো দেশটার? জঙ্গি ভয় নিয়ে, কয়জনই বা ভোট দিতে অাসবেন।

তবে এমন ভয় মানতে নারাজ টেবিলে বসে থাকা অারেকজন। তিনি বলেন, পুলিশ অাস্তানা ঘিরে রেখেছে। ভোটের পর অপারেশন। ভয়ের কী অাছে? মানুষ তো ভোট দেয়ার জন্য নিয়ত করেই রেখেছে।

জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে কুমিল্লা শহরের সদর দক্ষিণ থানাধীন ২৪নং ওয়ার্ডের গন্ধমতি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের তিনতলা বিশিষ্ট বাড়িটি বুধবার বিকেল ৪টার দিকে ঘেরাও করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

বৃহস্পতিবার কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের ভোট গ্রহণের পর ওই বাড়িতে অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন ও র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক মেজর মোস্তফা কায়জার।

পুলিশ ও র‌্যাব সূত্রে জানা যায়, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ঢাকায় এক জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ওই জঙ্গির দেয়া তথ্য বুধবার বিকেলের দিকে গন্ধমতি গ্রামের আহাম্মদ আলী ওরফে আহাম আলীর ছেলে দেলোয়ার হোসেন ড্রাইভারের তৃতীয় তলা বাড়িটি ঘেরাও করে র‌্যাব-পুলিশ ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আবদুল্লাহ আল-মামুন জানান, বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এক বা একাধিক জঙ্গি এ বাড়ির নিচতলায় রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাড়িটি ঘেরাও করার পর দোতলার মেস থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২/১৩ জন ছাত্রকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছে।

র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক মেজর মোস্তফা কায়জার জানান, বৃহস্পতিবার কুসিক নির্বাচনের ভোট গ্রহণের পর ওই জঙ্গি আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করা হবে। ঢাকা থেকে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট, সোয়াট ও বোমা বিশেষজ্ঞ দল আসার পর এ অভিযান শুরু হবে।

এদিকে কুসিক নির্বাচন ঘিরে ৩৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম তদারকি করতে অবস্থান করছে। নির্বাচন উপলক্ষে পুলিশের দুই হাজার ৪৫৬ জন সদস্য, র‌্যাবের ৩৩৮ জন সদস্য, বিজিবি ২৭ প্লাটুনের ৬শ জন সদস্য এবং কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সঙ্গে প্রশিক্ষত ব্যাটালিয়ন অানসারের ৫৩০ জন সদস্য ও আনসারের ১৪৪২ জনসহ ১৯৭২ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

এত বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকতেও জঙ্গি অাস্তানা নিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে নগরবাসী।

এএসএস/এমএম/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।