সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী সীমা, শঙ্কায় সাক্কু


প্রকাশিত: ০৫:০৪ এএম, ২৯ মার্চ ২০১৭

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা বলেছেন, যেকোনো নির্বাচনেই বিএনপির অভ্যাস নালিশ করা, এটা এখন নালিশের দল হয়ে গেছে। পরাজয়ের আশংকা থেকে তারা এসব নালিশ করে ও বক্তব্য দেয়। সুষ্ঠু নির্বাচনে আমি বিজয়ী হলেও পরে এ দলটি বলবে সুক্ষ্ম কারচুপি কিংবা ডিজিটাল কারচুপি হয়েছে। সেনাবাহিনী ছাড়াই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব এ নির্বাচনই তা প্রমাণ করবে।

মঙ্গলবার রাতে নির্বাচনী প্রচারণা শেষে জাগো নিউজকে এসব কথা বলেন সীমা।

তিনি বলেন, কুসিকের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু নগরীতে তার নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় এবং বিভিন্ন মিডিয়ায় সাক্ষাৎকারে বলছেন তিনি নগরীতে প্রায় ৪শ কোটি টাকার উন্নয়ন করেছেন। কিন্তু রাস্তার পাশে কাগজের ফুল ও লাল বাতি লাগিয়েই তিনি উন্নয়নের জয়গান গাইছেন, প্রকৃত পক্ষে তিনি নগরীর উন্নয়নের চেয়ে নিজের নিজের উন্নয়নই বেশি করেছেন।

৪শ কোটি টাকা নগরীতে বিছিয়ে দিলেও তো এর চিহৃ পাওয়া যেত কিন্তু সাক্কু সাহেব ভাঙা রাস্তা ও ডাস্টবিনের পাশে বাতি লাগানো ছাড়া দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন করেননি।

সীমা কুসিক নগরীর বহুমূখী সমস্যার কথা চিহ্নিত করে বলেন, এ নগরী এখন মুমূর্ষু রোগীর মতো হয়ে পড়েছে। গত ৫ বছরে উন্নয়ন বঞ্চনায় কাতরাচ্ছে। নগরী থেকে যানজট ও জলাবব্ধতা দূর করে মাস্টারপ্ল্যান অনুসারে উন্নয়ন করে কুমিল্লা মহানগরীকে একটি মডেল সিটি হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে আমি নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছি।

তিনি নির্বাচিত হলে আগামী একশ বছরের মহাপরিকল্পনা সামনে রেখে নগর উন্নয়নে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন।

সীমা বলেন, আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। বিগত সময়ে নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে স্থানীয় সরকারে ১৫ বছর দায়িত্ব পালন করেছি। ওই অভিজ্ঞতা দিয়ে নগরীকে সাজাতে চাই, মডেল নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

নগরীতে যানজট আর জলাবদ্ধতা প্রধান সমস্যা উল্লেখ করে সীমা বলেন, যানজট নিরসনে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নেব। ফুটপাথ জনগণের চলাচলের উপযোগী করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ফ্লাইওভার, ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। নগরীর চারপাশে বৃত্তাকার সার্কুলার রোড নির্মাণ করা হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে মাস্টারপ্ল্যান গ্রহণ করে কাজ করবো।

এছাড়া শিক্ষা, চিকিৎসাসহ নাগরিক সেবা প্রদানের পাশাপাশি সকল ধর্ম-বর্ণের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি অসাম্প্রদায়িক পরমতসহিষ্ণু শান্তির নগরী হিসেবে গড়ে তুলব।

সীমা বলেন, জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। নৌকার বিজয় মানেই দেশের উন্নয়ন। ৩০ মার্চ নৌকাকে বিজয়ী করার জন্য তিনি ভোটারদের কাছে অনুরোধ জানান।

এদিকে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বলেছেন, নতুন নির্বাচন কমিশন শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রতি দিয়েছেন, কিন্তু বাস্তবে তা দেখতে পাচ্ছি না।

তিনি বলেন, মামলায় জামিনে থাকা সত্ত্বেও তালিকা করে আমার নেতাকর্মী-সমর্থকদের পুলিশ গ্রেফতার করছে, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছে, হুমকী দিচ্ছে। ইসির কথা ও কাজের মিল খুঁজে পাচ্ছি না।

মঙ্গলবার রাতে প্রচারণা শেষ করে বিএনপি মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু জাগো নিউজকে এসব কথা বলেন।

সাক্কু বলেন, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এ শহরের উন্নয়ন কাজ একটি দীর্ঘ মেয়াদী ও চলমান প্রক্রিয়া, তাই নির্বাচনে বিজয়ী হলে ইনশাল্লাহ এসব কাজ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেব। কুসিকের প্রথম নির্বাচনে আমি দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না করেও বিজয়ী হয়েছি, এবার সুষ্ঠু ভোট হলে ও ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারলে কেউ আমার বিজয় ঠেকাতে পারবে না।

নিজের ২৭ দফা নির্বাচনী ইশতেহারের বিষয়ে সাক্কু বলেন, শিক্ষাখাতের উন্নয়নের জন্য আগামী ৫ বছরে বিদ্যমান স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের পাশাপাশি নতুন করে কুমিল্লা নগরীর সদর দক্ষিণ এলাকার কোটবাড়িকে কেন্দ্র করে একটি শিক্ষা নগরী গড়ে তোলা হবে।

নওয়াব ফয়জুন্নেছার নামে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, লালমাই ময়নামতি পাহাড়ে আদিবাসী জনগোষ্ঠির জন্য মাতৃভাষা কেন্দ্র, কিংবদন্তী সঙ্গীতজ্ঞ শচীন দেব বর্মণের নামে নগরীতে একটি সঙ্গীত কলেজ, একটি প্রকৌশল অথবা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়, নগরীর দক্ষিণাঞ্চলে মেয়েদের জন্য ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পশ্চিমাংশে ছেলেদের জন্য একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও ভিক্টোরিয়া কলেজের অবকাঠামোর উন্নয়ন করে আসন সংখ্যা বৃদ্ধিসহ শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেকগুলো পরিকল্পনা রয়েছে।

এছাড়া নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকসহ সমাজের কীর্তিমান ব্যক্তিদের নামে একটি করে পাঠাগার স্থাপন, দুঃস্থ মুক্তিযোদ্ধা, শিল্পী, সংগঠক, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হবে।

তিনি বলেন, ২০১২ সালের কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে আমি যখন বিজয়ী হই তখন শুধু দুটি পৌরসভাকে একত্রিত করা একটি সাইনবোর্ড সর্বস্ব সিটির মেয়র হিসেবে দায়িত্ব লাভ করি, ওই সময় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়, তাই বিরোধী দলে থেকে নানা প্রতিবন্ধকতার মাঝেও আমি ৪৩১ কোটি ২৭ লাখ টাকার কাজ করেছি।

নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সদর দক্ষিণের বাসিন্দা মনিরুল হক চৌধুরী আপনার (সাক্কু) প্রচারণা থেকে সড়ে যাওয়ায় ভোটের মাঠে কী প্রভাব পড়বে এমন প্রশ্নের জবাবে সাক্কু বলেন, এবারের নির্বাচন ব্যক্তির নির্বাচন নয়, প্রতীকের নির্বাচন।কোনো নেতার কথায় নয়, ভোটাররা ভোট দিবে প্রতীককে।

সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে সাক্কু বলেন, নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয় এবং জনগণ যদি কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে, ফলাফল যা-ই হবে আমি ও আমার দল মেনে নিবে।

তিনি বলেন, গত ১৫ মার্চের পর যেখানেই প্রচারণা চালাতে গিয়েছি সেখানেই অনেকের প্রশ্নের সন্মখীন হয়েছি ‘ভোটাররা দিতে পারবে কিনা।’

এফএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।