প্রমত্তা পুটিমারী নদী এখন সরু ড্রেন


প্রকাশিত: ০৬:৫২ এএম, ২২ মার্চ ২০১৭

এক সময়ে বাগেরহাট থেকে রামপাল যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম পুটিমারী নদী পথ এখন সরু ড্রেনে পরিণত হয়েছে। বিশ বছর আগেও যে নদীতে চলতো লঞ্চ-স্টিমার  সেই নদী এখন পায়ে হেটে পার হওয়া যায়। নদীর বুকে কাঁচা-পাকা ইমারত তৈরি করে গড়ে উঠেছে বসতি।

অপরিকল্পিতভাবে রেকডীয় খালের বাঁধ ও স্লুইচ গেট আটকে মাছ চাষের কারণে নাব্যতা হারিয়ে মরে গেছে পুটিমারী।  প্রায় ২০ কিলোমিটারের এ নদী পথ দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। বাগেরহাট শহরের দড়াটানা নদী থেকে রামপাল পর্যন্ত প্রমত্ত পুটিমারী নদীর এখন করুণ দশা।

বুধবার সকালে বাগেরহাট শহরতলীর বিসিক এলাকার পেছনে পুটিমারী নদীর সংযোগস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, দড়াটানা নদী ও পুটিমারী নদীর মোহনায় পানির ধারা ধীর গতিতে চলছে। তবে এ ধারাবাহিকতা বেশি দূরে নয়। সংযোগস্থল থেকে ক্রমেই পশ্চিম দিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে থেমে গেছে পানির ধারা।

পুটিমারী নদীর সংযোগস্থল বাগেরহাট শহরের রাধাবল্বভ এলাকায় মোহনায় এখনও জোয়ারের পানি প্রবেশ করে। মোহনা থেকে ৫০০ গজের মতো যেতে পুটিমারী নদীর ওপরে বাঁশের সাঁকো। বাঁশের সাঁকোর বাধা পেরিয়ে ছোট ডিংঙ্গি নৌকাও যেতে পারে না।  পানির ধারা  নদীর মোহনা  থেকে ডেমার দিকে দুই/তিন কিলোমিটারের বেশি হবে না। শাখা খালে বাঁধের কারণে নদীর এ প্রান্তেও  নাব্যতা হারিয়ে মরে গেছে নদী । অনেক জায়গায় নদীর চিহ্ন পর্যন্ত নেই । দীর্ঘদিন এ নদী খনন না করায় স্থানীয় কিছু ব্যক্তি ও প্রভাবশালীরা যে যার মতো মরা পুটিমারী নদীর বুকে চিংড়ি ঘের ও বসতি গড়ে তুলেছে।

bagerhat

কথা হয় রাধাবল্মম এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব রাজ মিস্ত্রি লুফরের সঙ্গে। তিনি বলেন, দক্ষিণের  জনপদ রামপালের সঙ্গে বাগেরহাট শহরের যোগাযোগের এক সময়ের অন্যতম মাধ্যম ছিল এই পুটিমারী নদীপথ। শহরে আসা-যাওয়া ও মালামাল আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে হাজার হাজার মানুষ নির্ভরশীল ছিল এই নদীর ওপর।  নদীতে চলতো লঞ্চ, স্ট্রিমার ও কার্গো। এখন সেই প্রমত্তা পুটিমারী নদী  সরু ড্রেন। আশির দশকে রামপাল, মংলা, বাগেরহাট অঞ্চলে চিংড়ি চাষ শুরু হলে  দক্ষিণবঙ্গের নদী খালের নাব্যতা হারাতে শুরু করে।

তিনি আরও বলেন, চিংড়ি চাষের ফলে প্রমত্তা পুটিমারী নদীর শাখা খালগুলোতে দেয়া হতে থাকে একের পর এক  বাঁধ। স্লুইচ গেট আটকে বছরের পর বছর চলতে থাকে প্রভাবশালীদের মাছ চাষ। অসংখ্য রেকর্ডীয় খালে অবৈধ বাঁধের কারণে পানির স্রোতধারা বন্ধ হয়ে যায় । সময়ের সঙ্গে পুটিমারী নদী স্রোত হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। এখনও এ নদীর ওপর নির্মিত ডেমা ব্রিজ কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

প্রমত্তা ডেমা ইউনিয়নের ডেমা ব্রিজ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে,  ব্রিজের নিচে নদী এখন সরু ড্রেন। সর্বোচ্চ চার ফুটের ওপরে সেই সরু ড্রেন দিয়ে পানি বইছে। নদীর দুই তীরে জমিতে বাঁধ দিয়ে স্থানীয়রা মাছচাষ করছেন। কেউ বাড়ি-ঘর নির্মাণ করে বসতি তৈরি করেছেন।  নদীর চিহ্ন মুছে ফেলতে জমি দখল করে বসতিতে কেউ কেউ পাকা ইমারত পর্যন্ত তৈরি করে ফেলেছেন।

স্থানীয় যুবক  শেখ সাহিন জানান, এ নদী এখন কুকুর লাফ দিয়ে পার হয়। বর্ষার সময়ে সরু ড্রেনের মতো নদী দিয়ে পানি সরানোর চেষ্টা চলে। অন্য সময়ে শুকনা খালে গরু ছাগল চরানো হয়। যে যার মতো নদীর পাড় দখল করে খাচ্ছে ।

bagerhat

এলাকার এক কৃষক সেখ রমিজ উদ্দিন জানান, পুটিমারী নদীর ডেমা এলাকায় ব্রিজ নির্মাণের আগে নদী খুব খরস্রোতা ছিল। ১৫/২০ বছর আগে এই নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণের পর থেকে নদী মরতে শুরু করে।

একই এলাকার বাসিন্দা আব্বাস মিয়া (৭০) বলেন,  চিংড়ি চাষের জন্য পুটিমারীর সঙ্গে সংযুক্ত অনেক খাল বন্ধ করার জন্যই নদী দিনে দিনে স্রোতহীন হয়ে পড়ে। তারপর খাল দখলের কারণে এক সময়ের পুটিমারী নদী এখন নেই বললেই চলে। নদী খনন করাসহ চিংড়ি চাষ বন্ধ করা গেলে নদীকে বাঁচানো যেতে পারে বলেও জানান তিনি। 

এ বিষয়ে বাগেরহাট -৩ আসনের সংসদ সদস্য তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, এক সময়ে স্থানীয় কিছু জনগণই নদীর খালে বাঁধ দিয়ে মাষ চাষ করে নদী ধ্বংস করেছে।

তিনি বলেন, সরকারের পাশাপাশি জনগণকে নিজ এলাকার নদী বাঁচাতে আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। বর্তমানে এই অঞ্চলের নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে দাউদখালী নদীসহ ১০৫ কিলোমিটার নদী খাল খনন করা হয়েছে। ফলে বেশ কিছু এলাকার নদীর নাব্যতা ফিরে এসেছে।  এই এলাকার ৮৪টি  শাখা খাল রয়েছে যা খনন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে এ জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

আরএআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।