৩৬৪ দিন পরও একই কষ্ট নিয়ে ফিরলো তারা
প্রতিবারের ন্যায় এবারও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ঠাকুরগাঁও সীমান্তে দুই বাংলার মিলন মেলা হয়েছে। ৩৬৪ দিন পর পর এই মেলাটি বসে সীমান্তে। এবারও স্বজনদের দেখতে মিলন মেলায় অংশ নেয় দুই বাংলা। প্রতি বছর এ মেলাতেই একে অপরের সঙ্গে দেখা করে স্বজনরা। কারণ, পাসপোর্ট ভিসা করে দেখা করার সক্ষমতা নেই অনেকের। তাই একমাত্র পথ এই মেলা।
মেলায় এসে একে অপরের সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয়, তারপরও কেনো যেন কষ্টের একটা ছাপ থেকেই যায় স্বজনের মুখে। কষ্টটা হলো একে অপরকে ছুঁতে না পারার কষ্ট। মাথায় হাত দিয়ে আদর করে দিতে না পারার কষ্ট। আর এই কষ্ট নিয়েই সময় শেষে স্বজনদের ফিরে যেতে হয় আবারো একটি বছরের জন্য। সকল কষ্টের কারণ শুধুই মাঝখানের ওই তার কাঁটার বেড়া।
বুধবার ঠাকুরগাঁও ধনতলা, হরিপুর উপজেলার ডাবরী সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডে মিলিত হয় দুই বাংলা। ঠাকুরগাঁও ৩০ বিজিবি ব্যাটালিয়ান ও ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এ মিলন মেলার আয়োজন করে।
এদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও বালিয়াডাঙ্গী ধনতলা ও হরিপুর উপজেলার ডাবরী সীমান্তের প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাংলাদেশ ও ভারতের হাজার হাজার মানুষ এই মেলায় অংশ নেয়।
এই মেলাকে কেন্দ্র করে উভয় দেশের সীমান্তে পর্যাপ্ত বিজিবি ও বিএসএফ মোতায়ন করা হয়। কঠোর পাহারায় কাঁটা তারের বেড়ার ফাঁক দিয়ে স্বজনদের একদৃষ্টি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে লাখো মানুষের ঢল নামে। এই ক্ষণিক মিলনে অনেকেই আবেগে আপ্লুত হয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
অনেকের মতোই মেলায় এসেছেন উষা ও নিরলার ভাই বিশ্বনাথ। থাকেন শিলিগুড়িতে। বোনের জন্য পিঠা এনেছেন। কথা হলেও নিজ হাতের তৈরি পিঠা দিতে পারেননি। তবুও দেখার আনন্দ নিয়ে বিদায় নিলেন তারা।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মুণ্ডুমালা থেকে শ্রাবন্তী রানী এসেছেন ভারতের কাকরমনি গ্রামে থাকা মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। মায়ের সাথে দেখা করার অনুভূতি বলতে গিয়ে শ্রাবন্তী বলেন, বিয়ের পর এই প্রথম মাকে দেখলাম। তবে তেমন কথা হয়নি। অসুস্থ মাকে একনজর দেখে এলাম। এখন একটু ভালো লাগছে।
হরিপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, হরিপুর উপজেলার অধিকাংশ এলাকা পাকিস্তান-ভারত বিভক্তির আগে ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার অধীনে ছিল। এ কারণে দেশ বিভাগের পর আত্মীয় স্বজনেরা দুই দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তাই সারা বছর এদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারেনা। অপেক্ষা করে থাকে এই দিনের।
দুই দেশের ভৌগলিক সীমারেখা আলাদা করা হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করে। কিন্তু, সে কাঁটাতার আলাদা করতে পারেনি দুই দেশের মানুষের ভালোবাসার টান। সুযোগ পেলেই এ টানেই তারা ছুটে যায় কাঁটাতারের বেড়ার কাছে, মিশে যান একে অন্যের সঙ্গে।
অনেকদিন পর আপনজনের দেখা পেয়ে আবেগে কেঁদে বুক ভাসান আর বুক হালকা করেন অনেকে। বিনিময় করেন মনের জমানো হাজারো কথা।
সাধারণ মানুষসহ নানা পেশার মানুষ এ মিলন মেলায় এসে স্বজনদের সাথে দেখা করতে পারায় আনন্দিত হয়। এই আবেগের জায়গা থেকেই অনেকেই সরকারের প্রতি দাবি তুলেছেন যে, এ মিলন মেলাকে যেন দুই বাংলার মানুষের মিলন মেলায় রূপান্তরিত করে স্থায়ী রূপ দেয়া হয়।
এমএএস/আরআইপি