কুমিল্লার বাঁশি যাচ্ছে দেশ-বিদেশে
নববর্ষের বৈশাখী মেলা ছাড়াও ঈদ কিংবা র্যালিতে বাঁশের বাঁশির কদর এখনও বেশ। বিশেষ করে বৈশাখী মেলায় শিশুদের অন্যতম আকর্ষণ বিভিন্ন ধরনের বাঁশি। তাইতো নববর্ষ উপলক্ষে কুমিল্লা মহানগরীর সংরাইশ এলাকায় দিবা-রাত্রি বাঁশি তৈরির কাজ হচ্ছে। ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন কারিগররা।
বছরে নববর্ষেই বাঁশির চাহিদা বেশি থাকে। এই বাঁশি চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও রাজধানীর ঢাকা, ফেনী, নোয়াখালী, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের অধিকাংশ জেলায় পাঠানো হচ্ছে। দেশের বাইরেও বেশ কদর রয়েছে কুমিল্লার বাঁশির। ঢাকার একাধিক ব্যবসায়ীর মাধ্যমে তা বিদেশে পাঠনো হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
জানা যায়, কুমিল্লা মহানগরীর সংরাইশ বৈষ্ণবপাড়ার ১০/১২টি পরিবার বাঁশের বাঁশি তৈরির কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাঁশি তৈরির জন্য তাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের রামঘর থেকে মুলি বাঁশ কিনে আনতে হয়। তাই অর্থের অভাবে এ শিল্পটি প্রায় বিলুপ্তির পথে। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও তারা এ আদি পেশায় জড়িয়ে আছেন। প্রতিটি পরিবারই বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে কোনো রকম টিকে আছে ।
শহরের সংরাইশ বৈষ্ণবপাড়ার মৃত রাধা চরণ বৈষ্ণবের ছেলে ষাট বছর বয়সী খোকন বৈষ্ণব ৩ যুগেরও অধিক সময় ধরে নিরলসভাবে এ কাজ করে আসছেন। তার পূর্ব পুরুষরাও এ কাজ করতেন। এটা তাদের আদি ব্যবসা।
এ বাঁশি কুমিল্লার সকল উপজেলা ছাড়াও রাজধানী ঢাকা, ফেনী, নোয়াখালী, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের সর্বত্র যাচ্ছে। এমনকি বিদেশেও যাচ্ছে কুমিল্লায় তৈরি করা বাঁশি।
এ ব্যাপারে সংরাইশ বৈষ্ণবপাড়ার মৃত স্বরূপ দাশ বৈষ্ণব এর ছেলে কৃষ্ণ দাশ বৈষ্ণব (৪৫) জানান, দীর্ঘ ২ যুগ ধরে বাঁশের বাঁশি তৈরি করছি। বাঁশি তৈরির জন্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের রামগড় থেকে মুলি বাঁশ কিনে আনতে হয়। এ কাজের জন্যে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। তাই অর্থের অভাবে এ কাজ করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন কৃষ্ণ দাশ।
তিনি বলেন, প্রতি সপ্তাহে ৪ থেকে ৫ হাজার করে কিস্তির টাকার পরিশোধ করতে হচ্ছে।
সংরাইশ বৈষ্ণবপাড়ার গীতা রাণী বৈষ্ণব (৫০) জানান, এ বাঁশি বিশেষ করে বৈশাখী মেলা, কোরবানি ঈদ, ওরস ও মাহফিলসহ বিভিন্ন সভা সেমিনার ও র্যালির কাজে ব্যবহৃত হয়। একশ বেলুন বাঁশি বর্তমানে ২০০ টাকা, ফেন্সি বাঁশি- ৫০০ টাকা, মুখ বাঁশি- ২৫০ টাকা, সেঁকা বাঁশি ৫০০ টাকা, মোহন বাঁশি- ১ হাজার টাকা, আর সাধারণ বাঁশি- ৫০০ টাকা ও সিটি বাঁশি- ২০০ টাকায় পাইকারি বিক্রি করছি।
তিনি আরো বলেন, এতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। অর্থের অভাবে এখন আর এ কাজ করতে কেউ আগ্রহ প্রকাশ করে না। ফলে এ শিল্পটি হয়তো ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। তবে সরকারি আর্থিক সহযোগিতা পেলে শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে এবং অনেককেই এ কাজের সাথে সম্পৃক্ত করা সম্ভব।
এসএস/এমএএস/এমএস