লক্ষ্য ঠিক রেখে কাজ করলে কোনো নারী পিছিয়ে থাকবে না


প্রকাশিত: ০৭:৫৬ এএম, ০৮ মার্চ ২০১৭

‘সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, পরিশ্রম এবং লক্ষ্য ঠিক রেখে কাজ করলে কোনো নারী পিছিয়ে থাকবে না।  অবশ্যই সে সামনে এগিয়ে যাবে। এটা প্রমাণিত।’

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে  চাঁদপুরের সুযোগ্য পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার এ মন্তব্য করেন।

তিনি নারী ও শিশুদের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হতে চাঁদপুরে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সেল’ গঠন করে তাদের সমস্যার কথা শুনে সমাধানের ব্যবস্থা করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে সহস্রাধিক অভিযোগ শুনে তা সমাধান করতে সক্ষম হয়েছেন।

chandpur-police-superশুধু তাই নয়, তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বাল্য বিয়ে, যৌতুক, মাদক ও ইভটিজিং বন্ধে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্য জাগরণ সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি সদ্য রাষ্ট্রপতি পদকপ্রাপ্ত হয়েছেন। এছাড়া পুলিশের জাতীয় প্যারেডে পর পর দুই বার নেতৃত্ব দিয়েছেন পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার।

জাগো নিউজকে তিনি জানান, বাল্য বিয়ে বন্ধ এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হলে একজন নারী কখনই বিপদগ্রস্ত হবে না। অর্থাৎ যার যার মেধায় সে চাকরি, কৃষিসহ সব ধরনের কাজে নিজেকে  প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে। এক কথায় সরকার নারীদের উন্নয়নে যে কাজ করছে তা দ্রুত সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার জানান, চাঁদপুর জেলাকে মাদক, সন্ত্রাস, বাল্য বিয়ে ও শিশু নির্যাতনসহ সমাজিক অপরাধমুক্তকরণে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে মাদক ব্যবসায়ীদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে তাদের পরিবারকে সতর্ক করার পাশাপাশি মাদকের ভয়াবহ ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরা হচ্ছে।

সুশীল সমাজের সহযোগিতায় বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিয়ে জেলার জনবহুল এলাকা, হাট-বাজারগুলোতে মাদকবিরোধী প্রচারণা অব্যাহত রাখা হয়েছে। পাশাপশি ‘মাদক বিক্রেতা ও মাদক সেবনকারীদের এ পথ থেকে সরে না আসলে কঠোর সাজার আওতায় আনার ব্যবস্থা গ্রহণসহ হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।

এদিকে একজন সফল নারী হিসেবে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার যা যা করে যাচ্ছেন তার মধ্যে অন্যতম নারী ও শিশুদের সেবা। তিনি শুধু মামলা গ্রহণই করেন না, মামলার অভিযোগ নিষ্পত্তিও করে থাকেন। প্রতিদিন কয়েকশ নারী-পুরুষ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আসছেন সুবিচার পাওয়ার আশায়।

গত দেড় বছরে চাঁদপুরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক হাজার অভিযোগ গ্রহণ করে সাত শতাধিক অভিযোগ নিষ্পত্তি করেছে। এর মধ্যে পাঁচশ অভিযোগ ছিল পারিবারিক আর দুই শতাধিক অভিযোগ ছিল জমি সংক্রান্ত, পূর্ব শত্রুতা, মারামরি, প্রতারণা ইত্যাদি।

আগে প্রতিদিন এ জেলায় যেখানে থানায় মামলা হতো ৭০ থেকে ১০০টি সেখানে বর্তমানে মামলা হচ্ছে ২০ থেকে ২৫টি। পুলিশের জাতীয় প্যারেডে পর পর দুই বার নেতৃত্ব দানকারী প্রথম নারী ও সদ্য রাষ্ট্রপতি পদকপ্রাপ্ত চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার পিপিএম এ জেলায় পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করার পর তার কার্যালয়ে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সেল’ চালু করেন।

এ সেলে প্রতিদিন কয়েকশ নারী-পুরুষ তাদের বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে আসছেন এবং মনখুলে সকল অভিযোগ জানাতে পারছেন। প্রথম দিকে পুলিশ সুপার নিজেই অভিযোগ শুনতেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা  নিতেন। কিন্তু দিন দিন অভিযোগকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি এতো সময় দিতে পারছেন না বলে বর্তমানে একজন নারী ও একজন পুরুষ পুলিশ এসআইকে অভিযোগ গ্রহণ এবং নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ নথি উপস্থাপনের দায়িত্ব দিয়েছেন।

তারা প্রতিদিন এ কাজটি অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে পালন করে আসছেন। বহু অভিযোগ পুলিশ সুপার নিজের কক্ষে বাদী বিবাদীকে ডেকে এনে নিষ্পত্তি করে দিচ্ছেন। ফলে বিচার প্রার্থীদের নিকট এই পুলিশ সুপার হয়ে উঠেছেন একজন নিষ্ঠাবান ও দেবতুল্য পুলিশ কর্মকর্তা। এই পুলিশ সুপার চাঁদপুর আসার পর জেলার আটটি থানার কর্মকর্তাদের নিয়ে ‘জনগণের দোর গোড়ায় পুলিশ’ এই মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে মাদক, বাল্য বিবাহ, ইভটিজিং, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, অবৈধ যানবাহন চলাচল বিশেষ করে ট্রাক্টর, সিএনজি ইত্যাদির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

চাঁদপুর জেলা পুলিশ এ জেলার বাড়িওয়ালা, ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করা। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, অনলাইনে জিডি কার্যক্রম, অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ব্যবস্থা চালু করতে সক্ষম হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি চাঁদপুর শহরের ফুটপাত থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ বক্স নির্মাণ করেন। ফলে এই জেলায় বর্তমানে পুলিশের কার্যক্রম নিয়ে জনমনে আশার আলো জেগে উঠেছে। পুলিশ সম্পর্কে জনগণের পুরনো ধারনা পাল্টাতে শুরু করেছে।

উল্লেখ্য, ফরিদপুরের মেয়ে শামসুন্নাহার চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড়। তার বাবা সামছুল হক ওরফে ভোলা মাস্টার ও মা আমিনা বেগম। তিনি ফরিদপুর সদর উপজেলার চর মাধবদিয়া ইউনিয়নের ইসমাইল মুন্সীর ডাঙ্গীতে জন্মগ্রহণ করেন। তারা দুই বোন ও দুই ভাই। সবার বড় তিনি। মা-বাবার স্বপ্নও তাকে নিয়ে ছিল আকাশ ছোঁয়া। মেজো ভাই ডাক্তার। সেজো ভাই হাইকোর্টের আইনজীবী। সবার ছোট বোন স্কুলের শিক্ষিকা। দুই সন্তানের জননী এ সফল নারী।

১৯৯১ সালে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন শামসুন্নাহার। থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৬ সালে বিএসএস ও ১৯৯৮ সালে এমএসএস ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ২০০১ সালে বিসিএস পাস করে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে পুলিশে যোগদান করেন।

আরএআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।