দুই নারীর ভাগ্য বদলানোর গল্প


প্রকাশিত: ০৬:০৮ এএম, ০৮ মার্চ ২০১৭

বৈষম্য আর বঞ্চনাকে হার মানিয়ে নিজেদের ভাগ্য ফিরিয়েছেন জয়পুরহাটের ২ নারী। দুঃখের সংসারে এখন তাদের সুখের দিন।

জয়পুরহাট সদরের ভাদসা ইউপির গোপালপুর গ্রামে মাত্র ১৩-১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয় ছাবিলার। সংসার জীবনে তাদের ১ ছেলে ও ১ মেয়ে। ছেলে বিয়ে করে আলাদা হয়ে যায়। এরমধ্যে মেয়েরও বিয়ে দেন তারা। কিন্তু মেয়েও তাদের দুঃখে ভাসিয়ে মারা যায়।

শোকে তার স্বামী তোতামিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েন। আজও তিনি ভালোভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি। অসহায় বিত্তহীন ছাবিলার পরিবারে চরম দুঃখ-কষ্ট ও দুর্দশা নেমে আসে। তখন থেকেই তিনি ৩ বেলা ভাতের চুক্তিতে মানুষের বাড়িতে ও জমিতে কাজ করে অবর্ণনীয় কষ্টে দিনাতিপাত শুরু করেন।

এভাবে কষ্ট করে নিজে খেয়েছেন, অসুস্থ স্বামীকে খাইয়েছেন। এমন করে অভাব ও বঞ্চনা সয়ে তার দাম্পত্য জীবনে কয়েক যুগ পার করেন। বছর ২ আগে একটি বেসরকারি সংস্থা তাদের অতি দরিদ্র কর্মসূচি নিয়ে ছবিলার কাছে আসে। তাকে তাদের সদস্য করে নেয়। তাকে নার্সারি করার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়।

বেসরকারি সংস্থাটি প্রশিক্ষণ শেষে ছাবিলাকে নার্সারি করার জন্য ১২ শতক জমি লিজ নিয়ে দেয়। চারা দেয়। চারার সঙ্গে আয়বর্ধক একটি ছাগলও দেয়। এখান থেকে ছাবিলা ১ বছরেই ৪ হাজার ১৫০টি বিভিন্ন ফলজ ও বনজ জাতের চারা ও শাক বিক্রয় করে ১ লাখ ১২ হাজার ১০০ টাকা আয় করেন।

এখন তার নার্সারিতে বিক্রয় উপযোগী বিভিন্ন জাতের ৫ হাজার ৩০০ ফলজ ও বনজ চারা রয়েছে। রয়েছে ফুলের চারাও। তিনি ১টি গরু ও ১টি ভ্যান কিনেছেন। নিজের নার্সারিকে আরও সম্প্রসারিত করতে চলতি বছরে নিজের খরচেই ২২ শতক জমি লিজ নিয়েছেন।

এবারের মৌসুমে তিনি ২ লাখ টাকার উর্ধ্বে আয় করবেন বলে আশা করছেন। এখন গড়ে তার মাসিক আয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।

তবে নিজের ভাগ্য বদলে বসে থাকেননি ছাবিলা। নিজের অতি দরিদ্র দেবরের স্ত্রী জুলেখাকে (১৮) নার্সারি করণে উদ্বুদ্ধ করেন। তার নার্সারি সংলগ্ন ৭ শতক জমি তাকে লিজ নিয়ে দেন। সেখানে জুলেখা বিভিন্ন জাতের ফলজ ও বনজ চারা উৎপাদন করছেন। এ থেকে প্রতি মাসে গড়ে তিনি আয় করছেন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা।

ছাবিলা (৫৮) ও জুলেখা (১৮) জানান, তাদের এখন আর কোনো দুঃখ-কষ্ট নেই। চলতি বছরেই তারা ২ জনে আধাপাকা বাড়ি করবেন।

ভাদসা ইউপি চেয়ারম্যান মো. গোলাম সারোয়ার স্বাধীন ও মহিলা ইউপি সদস্য মনোয়ারা বেগম জানান, তারা তাদের ইউনিয়নের অতি দরিদ্র পরিবারের এ ধরনের কার্যক্রমকে উৎসাহিত করেন ও সহায়তা দিয়ে থাকেন।

জয়পুরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, জয়পুরহাটে অতিদরিদ্রজনও এখন ভাগ্য ফেরাচ্ছে। এমন কার্যক্রম তারা মনিটরিং ও পরিদর্শন করছে। এমন উৎসগুলোকে সবরকম সহায়তা দেয়া হবে বলেও তিনি আরও জানান।

জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক মো. আব্দুর রহিম জানান, তিনি অতি দরিদ্রজন থেকে ভাগ্য ফেরানো এই রকম বেশ কয়েকটি কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন।

রাশেদুজ্জামান/এফএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।