মাদরাসার আড়ালে জঙ্গি প্রশিক্ষণ দিতেন আবুল কাশেম


প্রকাশিত: ০৩:০০ এএম, ০৫ মার্চ ২০১৭

ঢাকায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটি) ইউনিটের হাতে গ্রেফতার নব্য জেএমবির আধ্যাত্মিক নেতা এবং জেএমবির (মূল ধারার) একাংশের আমির মাওলানা আবুল কাশেমের বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার দুর্গম ব্রহ্মপুত্র নদ বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল উত্তর কোদালকাটি চরে।

বাড়িতে দুইটি দোচালা টিনের ঘর ছাড়া তেমন কিছুই নেই। ৭ ছেলে ও ৩ মেয়ের জনক তিনি ।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, প্রথমে আবুল কাশেম অষ্টমীচর ইউনিয়নের ডাটিয়ারচর বাজারে পল্লী চিকিৎসক এবং হাফেজিয়া মাদরাসার হুজুর ছিলেন। বিএনপি-জামায়াতের আমলে ২০০৪ সালের শুরুর দিকে ওই হাফেজিয়া মাদরাসাটি শিক্ষার্থীদের জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলেন তিনি। মাদরাসার শিক্ষার্থী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসা হতো ওই দুর্গম চরে। সারারাত ধরে চলতো বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ।

ডাটিয়ার চরের বাসিন্দা মজিবুর রহমান, সোলেমান মাস্টার, করিম মন্ডল ও ইদ্রিস আলী জানান, আবুল কাশেম ডাটিয়ারচর হাফেজিয়া মাদরাসাকে জঙ্গি প্রশিক্ষণ হিসেবে ব্যবহার করতো।মাদরাসায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা অপরিচিত মধ্য বয়সী ও কিশোর যুবকদের যাতায়াত ছিল । এশার নামাজের পর বসতো মজলিস। যা ফজরের আজানের আগ পর্যন্ত চলতো। তাদের সবার খাবার রান্না হতো কাশেম হুজুরের বাড়িতে। তবে বাইরের কোনো পুরুষ বা নারী তার বাড়িতে ঢুকতে পারত না। কারণ পরিবারের সবাই পর্দানশীল।

আবুল কাশেম রাজীবপুরের করাতিপাড়া ও দিয়ারার চরের প্রায় দু’শতাধিক পরিবারকে পর্দানশীল করে গড়ে তোলেন। প্রথমে হাফেজিয়া মাদরাসার হাফেজ বানানোর কথা বলেই মাদরাসা চালু করেন তিনি।

Kurigram

তবে আবুল কাশেম নির্দোষ দাবি করে স্ত্রী মমতাজ বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘উনি (আবুল কাশেম) গত বছরের ১৬ মে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর আর ফেরেনি। জঙ্গি হামলার সঙ্গে আমার স্বামী জড়িত নেই। ঢাকার মিরপুর এলাকা থেকে অন্যায় ভাবে চক্রান্ত করে আমার স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

উত্তর কোদালকাটি ইউপি সদস্য কামাল হোসেন বলেন, আমরা অনেক সময় শুনতাম আবুল কাশেম জঙ্গি নেতা। সে মাদরাসার শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে জঙ্গি হিসেবে গড়ে তোলেন। সেসময় আইনশৃংখলা বাহিনীকে স্থানীয়রা জানালেও দুর্গম চর হওয়ার কারণে তারা বিষয়টি নজরে নেননি। ফলে আজ এইসব দুর্গম চরাঞ্চল থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছে।

কোদালকাটি ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ছক্কু জানান, তার বাড়িতে বিভিন্ন সময় বহিরাগত লোকজন আসত কিন্তু আমরা বুঝতে পরিনি তিনি জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মেহেদুল করিম জানান, আবুল কাশেমের বাড়ি কুড়িগ্রামে শুনেছি। কিন্তু এখনও তেমন কোনো তথ্য জানা যায়নি।

উল্লেখ্য, গত ২ মার্চ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে নব্য জেএমবির আধ্যাত্মিক নেতা এবং জেএমবির (মূল ধারার) একাংশের আমির মাওলানা আবুল কাশেমকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটি) ইউনিট।

সেসময় ডিএমপি জানায়, মাওলানা আবুল কাশেম জেএমবি ও নব্য জেএমবির বেশ কয়েকটি হামলার সঙ্গে জড়িত। এসব সংগঠনের আটক অনেক সদস্যের জবানবন্দিতে মাওলানা আবুল কাশেমের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি উঠে আসে।
 
এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।