পুলিশ কর্মকর্তার মহৎ উদ্যোগ


প্রকাশিত: ০৪:০৩ পিএম, ০৪ মার্চ ২০১৭

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে স্বামী-সন্তান হারা ৭৫ বছর বয়সী রূপবাহারের জন্য একটি আদর্শ বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছেন পুলিশের  সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আবুল কালাম আজাদ। নিজের ভবিষ্যতের জন্য জমাকৃত তহবিল (জিপিএফ) থেকে টাকা উত্তোলন করে তিনি বাড়িটি  নির্মাণ করেছেন।

আদর্শবান এই পুলিশ কর্মকর্তা রূপবাহারকে মা ডেকে তার জন্য আদর্শ বাড়ি নির্মাণ করে দিয়ে মহতি কাজ করলেন। দেশে এখনো ভালো পুলিশ সদস্য রয়েছে তা আবারও প্রমাণ করলেন নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ থানায় কর্মরত পুলিশের এএসআই আবুল কালাম আজাদ।

রোববার স্থানীয় মুরুব্বিদের নিয়ে এক মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে অসহায় রূপবাহারের কাছে নির্মাণাধীন আদর্শ বাড়িটি হস্তান্তর করা হবে।

এদিকে, খোলা আকাশের নিচ থেকে উপজেলার সনমান্দি ইউনিয়নের সনমান্দি গ্রাম থেকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া ও চিকিৎসা শেষে বাড়ি নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে তার সার্বিক জীবন মান উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন আবুল কালাম আজাদ। তিনি প্রথম থেকেই বৃদ্ধা রূপবাহারকে মা মনে করেই সেবা করার প্রতিশ্রুতি দেন। আর তিনি বাস্তবে তাই করে যাচ্ছেন।  

সরেজমিনে শনিবার রূপবাহারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, রঙিন টিনের চার চালা একটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ঘরের পাশে একটি ফুলের বাগান তৈরি করা হয়েছে। পুলিশের অর্থে রূপবাহারের আদর্শ বাড়ি নির্মাণের খবরে সনমান্দিসহ আশপাশের ইউনিয়নের কৌতুহলী লোকজন প্রতিদিনই রূপবাহারের বাড়িতে ভিড় করছেন।

পার্শ্ববর্তী বারদী ইউনিয়নের মজিদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের চারপাশে বহু ধনী লোক থাকতে রূপবাহারের এ করুন পরিণতি দেখতে হয়। এখানে বড় কোনো স্বার্থ নেই। তাই আমরা দেখেও না দেখার ভান করে থাকি। অথচ একজন পুলিশ সদস্য তা দেখিয়ে দিল। তিনি প্রমাণ করে দিলেন পুলিশ জনগণের বন্ধু।   
 
সোনারগাঁও থানা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সনমান্দি পূর্ব পাড়া এলাকার একটি মসজিদে বক্তব্য শেষে থানার আসার সময় একজনের মাধ্যমে জানতে পারি একজন বৃদ্ধার করুণ পরিণতির কথা। পরে তার বাড়িতে গিয়ে দেখি একটি ঝুপড়ি ঘরে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে রয়েছেন।

পরে তাকে সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করার পর তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। তার জন্য আমি আমার চাকরির সাধারণ ভবিষ্যৎ তহবিল থেকে টাকা উত্তোলন করি এবং আমার স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে রূপবাহারের জন্য প্রায় এক লাখ টাকা ব্যয় করে একটি আদর্শ বাড়ি নির্মাণ করেছি। তাকে মা ডেকে মায়ের সম্মান দিয়েছি।

এ বিষয়ে আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী সুমি আক্তার বলেন, রূপবাহার বেগম অসুস্থ হয়ে হাসপাতাল ভর্তি থাকা অবস্থায় আমার স্বামী তাকে একটি ঘর নির্মাণ করে দেয়ার ঘোষণা দেন। আমার স্বামীর চাকরির ভবিষ্যৎ তহবিল থেকে উত্তোলিত টাকায় ঘর নির্মাণ না হওয়ার কারণে আমি আমার গহনা বিক্রি করে অসহায় মাকে ঘর নির্মাণ করে দেয়ার জন্য তার হাতে টাকা তুলে দেই।

সনমান্দি গ্রামের আফাজউদ্দিন বলেন, পুলিশ খারাপ লোক এটাই জানতাম। এখন জেনেছি সব পুলিশ শুধু খারাপ কাজই করে না। ভাল কাজও করেন। অসহায় রূপবাহারকে দেখার কেউ না থাকায় আজাদ স্যার তাকে নিয়ে হাসপাতাল ভর্তি করে সুস্থ করে থাকার জন্য একটি সুন্দর ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন। সকল পুলিশ সদস্যরা যদি এভাবে সমাজের ভালো কাজে এগিয়ে আসে তাহলে পুলিশ বাহিনীর সুনাম বিশ্বের দরবারে ছড়িয়ে পড়বে।  

সোনারগাঁও থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মো. মঞ্জুর কাদের জানান, পুলিশ কর্মকর্তা আজাদ সোনারগাঁওয়ে অনেক প্রশংসনীয় কাজ করেছেন। তিনি শুধু রূপবাহারকেই নয় এর আগেও বেগম নামের এক মহিলাকে ময়লার স্তূপ থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে এক মাস নিজ খরচে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাছাড়া একটি নবজাতককে উদ্ধার করে এক প্রবাসীর কাছে লালন-পালন করার দায়িত্ব দিয়েছেন। তার এসব কাজের জন্য পুলিশ বাহিনীর মুখ উজ্জ্বল হবে।  

আরএআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।