চিকিৎসক সংকটে জয়পুরহাটের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো


প্রকাশিত: ১২:১৯ পিএম, ০৯ এপ্রিল ২০১৫

জয়পুরহাটের ৫টি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর বেহাল দশা। দিন দিন উপজেলাগুলোতে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও স্বাস্থ্যসেবার দিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদাসীন। ফলে এক প্রকার বাধ্য হয়েই রোগীরা দালালের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন ক্লিনিকগুলোর দিকে ঝুঁকছে। এতে করে গ্রামের অসহায় দরিদ্র রোগীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

উপজেলাগুলোতে সর্বশেষ মার্চ মাসের রোগীর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ওই উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ০-৫০ বৎসর পর্যন্ত ১২৮২ জন রোগী, জরুরী বিভাগে ১৬২৪ জন রোগী এবং ১৪৩৬৫ জন রোগী বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন।

স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী একটি ৫০ শয্যার হাসপাতালে ২৬ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে সব সময় চিকিৎসক সংকট লেগেই আছে।

জয়পুরহাট সদর,পাঁচবিবি, কালাই, ক্ষেতলাল, আক্কেলপুর স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে মঞ্জুরিকৃত চিকিৎসকের পদের সংখ্যা ৯৯টি। এর মধ্যে সার্জারি, শিশু কনসালটেন্ট নাক-কান-গলা, হৃদরোগ, হাড়-জোড়, চর্মরোগ, এ্যানেস্থিসিয়া, গাইনী, চক্ষু ডেন্টাল ও মেডিকেল অফিসারসহ ৪১টি পদ শূন্য রয়েছে।

জয়পুরহাটের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (সার্জন) ও এ্যানেস্থিসিয়া ডাক্তারের অভাবে অপারেশন কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি এখনও সংশ্লিষ্টরা। ফলে কোটি টাকা মূল্যের অপারেশনের যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এছাড়া প্যাথলজি, এক্সরে, ইসিজি ও অপারেশন কার্যক্রমের ব্যবহার না থাকায় বিপাকে পড়েছেন দুস্থ ও গরীব রোগীরা।

বহির্বিভাগে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন মেডিকেল সহকারীরা। এতে চিকিৎসা সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব রোগীরা জীবন রক্ষার্থে সহায় সন্বল বিক্রি করে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে ক্লিনিক বা জেলা সদরের ক্লিনিকগুলোতে গিয়ে অপারেশন করাতে বাধ্য হচ্ছেন।

আক্কেলপুর উপজেলার রুকিন্দিপুর ইউনিয়নের আউয়ালগাড়ি গ্রামের সাবিনা নামের এক বধূকে সন্তান ভুমিষ্ঠের জন্য হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক না থাকায় তাকে জেলা সদরের হাসপাতালে নিলে সিজার করার পরামর্শ দেয়া হয়। পরে তারা একটি ক্লিনিকে নিয়ে ১২ হাজার টাকা খরচ করে সিজার করান। এ কারণে গর্ভবতী মায়েদের জন্য সরকারের দেয়া ডিএসএফ (মাতৃ স্বাস্থ্য ভাউচার স্কিম) কার্যক্রমের অপারেশনের টাকা ও সামগ্রী তারা পাননি।

পাঁচবিবিতে বুধবার শিশুর চিকিৎসা নিতে আসা বাবা মোশারফ হোসেন জাগোনিউজকে জানান, তিনদিন ধরে ছেলের সর্দি-জ্বর হওয়াতে এখানে নিয়ে এসেছি। কিন্ত, কনসালটেন্টের অভাবে চিকিৎসা পায়নি ফলে বাধ্য হয়ে জেলা সদরে নিতে হচ্ছে।

আক্কেলপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কমল ও পৌর মেয়র আলমগীর চৌধুরী বাদশা জানান, হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় এখানকার চিকিৎসা সেবা ভেঙে পড়েছে। এখানে গরীর ও দুস্থ মানুষের চিকিৎসা সেবা নাই বললেই চলে।

জয়পুরহাটের সিভিল সার্জন ডা. এসএম আব্দুল জলিল জাগোনিউজকে বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বার বার আবেদন করেও কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। জয়পুরহাট আধুনিক হাসপাতাল থেকে ডাক্তার শূন্য করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেওয়া হয়েছে। ফলে হাসপাতালে ডাক্তার শূন্য থাকায় আমরা অসুবিধায় পড়ে গেছি।

দ্রুত এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর সব সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন, এমনটাই আশা করছেন ওই এলাকার উপজেলাবাসী।

এমজেড/এমএএস/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।