ভাইকে না পেয়ে দুই বোনকে ধরে নিয়ে গেল পুলিশ


প্রকাশিত: ১১:৫২ এএম, ০২ মার্চ ২০১৭

ভৈরবে পুলিশের মিথ্যা মামলায় বুশরা আক্তার পান্না (১৫) নামের দশম শ্রেণিপড়ুয়া এক ছাত্রী এবং তার বড় বোন দুই সন্তানের মা বন্যা আক্তারকে (২০) গ্রেফতার করে শারীরিক নির্যাতন করে আদালতে সোপর্দ করার অভিযোগ করেছে তাদের পরিবার।

এ নিয়ে তাদের রিকশাচালক বাবা খায়ের মিয়ার পরিবারে এখন চলছে বুকফাটা মাতম। তারা নিরপরাধ মেয়েদের মুক্তির দাবিসহ অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার, পুলিশের উপ-পরিদর্শক নজমুল হুদার বিচার দাবি করেছেন। বিষয়টির নিন্দা জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ভৈরব থানা পুলিশের এসআই নজমুল হুদা তার বড় ছেলে কাউসারকে একটি ছিনতাই মামলার আসামি হিসেবে গ্রেফতার করতে তাদের বাসায় যান। এ সময় পুলিশ ঢুকতে গিয়ে বাসার বন্ধ গেটটি ভেঙে ফেললে পান্না ও তার বোন বন্যা প্রতিবাদ করেন।

প্রতিবাদ করায় নজমুল হুদা তাদের অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করে বলেন, তোর ভাই কাউসার কোথায়। তখন তারা বলে সে বাড়ি নেই। একপর্যায়ে ঘরে প্রবেশ করে ঘরের জিনিসপত্র তছনছ করে দুই বোনকে ধরে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। আদালত তাদের জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠান। গত ছয়দিন ধরে তারা দুই বোন জেলে।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় রিকশাচালক বাবা মো. খায়ের ও মা মরিয়ম বেগম ভৈরব প্রেসক্লাবে এসে ঘটনাটি জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তারা অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলে অপরাধী হলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করুক। কিন্তু আমার নিরীহ দুই মেয়েকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করলো কেন, আমি ঘটনার বিচার চাই।

তিনি বলেন, আমি আওয়ামী লীগের সমর্থক। তার প্রমাণও আছে। কিন্তু পুলিশ দুই বছর আগের একটি পিকেটিং হত্যা মামলায় আমার দুই মেয়েকে বিএনপির মিথ্যা কর্মী দেখিয়ে জেলে পাঠিয়েছে।

থানা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধার রিকশাচালক লুৎফর রহমার সিলেট থেকে বাসে যাওয়ার সময় বাসটি ভৈরব পৌঁছালে বিএনপির কর্মীরা ইটপাটকেল ছুড়লে গুরুতর আহত হয়ে মারা যান তিনি।

এ ব্যাপারে তার স্ত্রী মমেনা বেগম কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি করে ভৈরব থানায় মামলা করেন। এ ঘটনার দুই বছর পর এসআই নজমুল দুই বোনকে বিএনপির কর্মী দেখিয়ে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠান।

পুলিশের এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় চলছে। এলাকাবাসী বলছে, ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো। জহির উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. অহিদুর রহমান বলেন, পান্না দশম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী। সে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়।

স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. লোকমান হোসেন বলেন, মেয়েরা রাস্তায় পিকেটিং করতে যাবে কেন। এলাকার কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম বলেন, ভৈরবে মেয়েদের কখনো রাস্তায় পিকিটিং করতে দেখিনি। তারা এ মামলায় গ্রেফতার হবে কেন?

এ ব্যাপারে এসআই নজমুল বলেন, কাউসারকে গ্রেফতার করতে তাদের বাড়িতে গেলে দুই বোন পুলিশের ওপর চড়াও হয়। মিথ্যা মামলায় তাদের কেন আদালতে চালান দেয়া হলো তার সঠিক জবাব দিতে পারেননি তিনি।

ভৈরব থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোখলেসুর রহমান জানান, কাউসার এলাকার চিহ্নিত ছিনতাইকারী। আসামি ধরতে গেলে তারা দুই বোন পুলিশের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। নাশকতা না করলে ঘটনাটি তদন্ত করে তাদের মামলা থেকে বাদ দেয়া হবে বলেও তিনি জানান।

ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলরুবা আহমেদ জানান, মেয়ে দুটির পরিবারের সদস্যরা আমার অফিসে এসেছিল। ঘটনাটি আমি শুনেছি। এটা খুবই দুঃখজনক।

আসাদুজ্জামান ফারুক/এএম/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।