হঠাৎ ধর্মঘটে চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৭:১০ এএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় মিশুক মুনীর ও তারেক মাসুদসহ ৫ জন নিহতের মামলায় বাসচালক জামির হোসেনের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে পরিবহন ধর্মঘট। আর এতেই ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে যাত্রীদের।

দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সড়ক পরিবহন শ্রমিকরা খুলনার সড়কগুলোতে ছোট যান চলাচলও বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে দূরপাল্লার যাত্রীরা অসহায় পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন।

সড়ক পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণার পর হঠাৎ নতুন করে ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

খুলনা জেলা বাস মিনিবাস কোচ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন সোনা জাগো নিউজকে জানান, ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়নি, বিভাগীয় কমিশনারের অনুরোধে শুধুমাত্র খুলনা জেলায় কিছুটা শিথিল করা হয়েছিল। বাকি ৯ জেলায় ধর্মঘট চলমান ছিল। তবে রাত ৯টায় ঢাকায় মালিক সমিতি এবং শ্রমিক নেতাদের কেন্দ্রীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যৌথ এই বৈঠকেই দেশব্যাপী ধর্মঘট কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

dharmoghot

এদিকে, ধর্মঘটের ফলে রাজশাহী ছেড়ে যায়নি কোনো গন্তব্যের যানবাহন। হঠাৎ আহ্বান করা এ ধর্মঘটে রাস্তায় বেরিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। বাধ্য হয়ে কেউ চাপছেন অবৈধ যান ভটভটিতে। চাপ বেড়েছে ট্রেনের উপর। সুযোগ বুঝে বাড়তি ভাড়াও হাঁকছেন অটোরিকশা চালকরা।

রাজশাহী শহরের কাদিরগঞ্জ এলাকার কামরুজ্জামান নওগাঁর মান্দা উপজেলার একটি কলেজের শিক্ষক। বাসযোগে নিয়মিত রাজশাহী থেকেই কলেজে যাওয়া-আসা করেন তিনি। কিন্তু সকালে বেরিয়ে নগরীর রেলগেট বাস স্টপেজে জানতে পারেন পরিবহন ধর্মঘটের খবর। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়ায় সিএনজি চড়তে হলো তাকে। একই দশা অন্যদেরও।

একই দাবিতে চাঁদপুরেও পালিত হচ্ছে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট। ধর্মঘটের কারণে চাঁদপুর থেকে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ অন্তত ২০টি রুটে সকল ধরনের যাত্রীবাহী যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধির দেয়া তথ্যমতে, মৃত্যু পথযাত্রী এক আত্বীয়কে দেখতে ঢাকায় যাচ্ছিলেন আকরাম হোসেন। সঙ্গে স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে। সকাল ৭টায় মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছেই দেখেন কোনো বাসই ঢাকায় যাচ্ছে না।

dharmoghot

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে মিরপুরে যাচ্ছিলেন সাইফুল। সকাল থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের টেপড়া বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকলেও কোন বাস নেই। বাসের অভাবে তার স্বপ্নের চাকরির ইন্টারভিউ দেয়া হলো না।

পূর্বঘোষণা ছাড়াই পরিহন শ্রমিকরা সারাদেশে বাস ধর্মঘট ডাকায় মানিকগঞ্জেও ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজারো মানুষ। সকাল থেকে প্রতিটি বাস কাউন্টারে তালা ঝুলিয়ে শ্রমিকরা এ কর্মসূচি পালন করছেন।

মঙ্গলবার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের প্রতিটি বাসস্ট্যান্ড, আরিচা এবং পাটুরিয়া ঘাটে শত শত যাত্রীদের যানবাহনের অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। অনেকেই আবার মাইলের পর মাইল হেঁটে রওনা হন গন্তব্যের পথে।

আদালতের রায়কে উপেক্ষা করে ধর্মঘট এবং কর্মবিরতি পালন করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। তারা বলেন, এই সিদ্ধান্ত আদালত অবমাননার শামিল। সরকার এবং বিচার বিভাগকে এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান তাদের।

এছাড়া দ্বিতীয় দিনের মত আজও ফরিদপুর থেকে কোনো ধরনের পরিবহন ছাড়েনি। গতকাল সোমবার বেলা ১১টা থেকে ফরিদপুর জেলার আভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সকল রুটে পরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

ফরিদপুর মোটর ওয়ার্কার্স শ্রমিক ইউনিয়নের (১০৫৫) সহ-সভাপতি মো. জাকির হোসেন জানান, কেন্দ্রীয় নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত ফরিদপুর থেকে কোনো ধরনের বাস চলাচল করবে না।
 
কিন্তু হঠাৎ করে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা। অনেকে বাসস্ট্যান্ডে উপস্থিত হয়ে পরিবহন না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়ে বিকল্প পন্থায় গন্তব্যে পৌঁছানের চেষ্টা করেছে।

অপরদিকে বরিশালে কেবল বাস নয় মাইক্রেবাস চলাচলও বন্ধ রয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে হাজার হাজার যাত্রী।

মাইক্রোবাস চালক মো. মিজান জানান, ভুরাঘাটা, মস্তফাপুর আর মাদারীপুরে বাস শ্রমিকরা তাদের মাইক্রোবাস চালকদের পিটিয়ে আহত করে। এজন্য আজ সকাল থেকে বাধ্য হয়ে মাইক্রোবাস চালানো বন্ধ রেখেছেন।

জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আফতাব হোসেন জানান, বিচারকের রায় নিয়ে কথা বলা যাবে না বটে, তবে দুর্ঘটনার জন্য বাসচালক সত্যিকারের দোষী কিনা তার স্পষ্ট উল্লেখ করা না পর্যন্ত এটা আমরা মানতে পারছি না। কেন্দ্রীয় কমিটি ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে, দাবি মানা না হলে কঠোর কর্মসূচি নেয়া হবে।

এছাড়া পরিবহন ধর্মঘট কর্মসূচির অংশ মুন্সীগঞ্জের ঢাকা-মাওয়া রুটের সকল গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে মাওয়া মহাসড়কে চলাচলকরা স্থানীয় সকল গণপরিবহন বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।

প্রচেষ্টা পরিবহনের চেয়ারম্যান মো. নোমান মিয়া জানান, এ কর্মসূচিতে বাস মালিকদের অংশগ্রহণ নেই। কিন্তু শ্রমিকরা এ কর্মসূচি পালন করাতে মাওয়া রুটের ১৪টি গণপরিবহনের সবকটিই বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সবকটি গণপরিবহন সার্ভিসও এরুটে চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এফএ/এমএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।