রাগীব আলীর প্রতারণা মামলার রায় ২৬ ফেব্রুয়ারি


প্রকাশিত: ০৯:০৩ এএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সিলেটের তারাপুর চা বাগানের হাজার কোটি টাকার দেবোত্তর সম্পত্তি প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগে শিল্পপতি রাগীব আলী ও তার ছেলে-মেয়েসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে করা আলোচিত মামলার রায় আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করা হবে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরুর আদালতে মামলার শুনানি শেষে রায় ঘোষণার এ তারিখ নির্ধারণ করেন বিচারক।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মামলার শুনানি করেন মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. মাহফুজুর রহমান।

তিনি  জানান, রাগীব আলী ও তার ছেলের উপস্থিতিতে মামলায় মোট ৩৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ২২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করে সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। বৃহস্পতিবার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেন আদালতের বিচারক।

আদালত সূত্র জানায়, ২০০৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম আবদুল কাদের বাদী হয়ে ভুয়া সেবায়েত সাজিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে সরকারের হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের জালিয়াতির অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা করেন সিলেটের কোতোয়ালি থানায়।

উচ্চ আদালতের নির্দেশে দীর্ঘদিন মামলা দুটির কার্যক্রম স্থগিত ছিল। গত বছরের ১৯ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ রায়ে মামলা দুটি পুনরুজ্জীবিত করার নির্দেশ দিলে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

সিলেটের মুখ্য মহানগর বিচারিক হাকিম আদালতে গত ২ ফেব্রুয়ারি তারাপুর চা-বাগান বন্দোবস্ত নিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতির মামলায় ছেলেসহ রাগীব আলীকে ১৪ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। একই আদালতে ভূমি আত্মসাৎ মামলায় ১৫ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণ ও আজ ২৩ ফেব্রুয়ারি যুক্তিতর্ক শেষ হয়।

তারাপুর চা বাগান দখলের মামলার চার্জশিটভুক্ত ছয় আসামির মধ্যে তারাপুর চা বাগানের সেবায়েত পংকজ কুমার গুপ্ত ও ভুয়া সেবায়েত রাগীব আলীর সম্পর্কে ভাগ্নে জামিনে আছেন।

তবে ওই মামলায় দৈনিক সিলেটের ডাকের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি শিল্পপতি রাগীব আলী ও তার ছেলে আবদুল হাই গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আটক। এছাড়া মেয়ে সোনিয়া কাদির ও মেয়েজামাই আবদুল কাদির পলাতক।

উল্লেখ্য, গত ১০ আগস্ট রাগীব আলী, তার ছেলে-মেয়ে ও জামাতাসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরদিন থেকে আত্মগোপনে চলে যায় রাগীব আলী পরিবার। এরপর কোনো এক সময়ে সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে তারা ভারত পালিয়ে যান। পরে পিতা-পুত্র দেশে ফেরার পথে ভারত ও বাংলাদেশ পুলিশের হাতে আটক হন।

৪২২ দশমিক ৯৬ একর জায়গায় গড়ে ওঠা তারাপুর চা-বাগান পুরোটাই দেবোত্তর সম্পত্তি। ১৯৯০ সালে ভুয়া সেবায়েত সাজিয়ে বাগানটির দখল নেন রাগীব আলী। নিজের নামে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ ৩৩৭টি প্লট তৈরি করে বিক্রি করেন রাগীব আলী। এসব প্লটে গড়ে উঠেছে বহুতল আবাসন ও বিপণি-বিতান।

গত ৩১ আগস্ট তারাপুর চা বাগানের দেবোত্তর সম্পত্তিতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ৭১৫টি স্থাপনা সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মো. মাহবুবুর রহমান সেবায়েতকে স্থাপনাগুলো বুঝিয়ে দেন।

এরও আগে গত ১৯ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে হাইকোর্টের আপিল বিভাগের এক বেঞ্চ তারাপুর চা-বাগান দখল করে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা ছয় মাসের মধ্যে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন। রায় বাস্তবায়ন করতে সিলেটের জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়।

গত ১৫ মে চা বাগানের বিভিন্ন স্থাপনা ছাড়া ৩২৩ একর ভূমি সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন।

ছামির মাহমুদ/আরএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।