তারেক-মিশুকের দুর্ঘটনা মামলার রায় বুধবার


প্রকাশিত: ০৪:০৫ এএম, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
ফাইল ছবি

দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের মামলার রায় আগামীকাল বুধবার। মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা  জজ আদালতে এ রায় ঘোষণা হবে।

মামলার একমাত্র আসামি বাস চালক জামির হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর প্রত্যাশা আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শালজানা গ্রামে কাগজের ফুল সিনেমার সুটিংস্পট দেখে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ কয়েকজন মাইক্রোবাস যোগে ঢাকায় ফিরছিলেন। এসময় মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। পথিমধ্যে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জোকা এলাকায় তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসের সঙ্গে বিপরীতমুখি চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের সংর্ঘষ হয়। কিছু বুঝে উঠার আগেই প্রাণ হারান তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন। নিহত অন্য তিনজন হলেন- তারেক মাসুদের চলচ্চিত্র প্রডাকশন সহকারী ওয়াসিম ও জামাল এবং মাইক্রোবাস চালক।

এই দুর্ঘটনায় আহত হন তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিল্পী ঢালী আল মামুন ও তার স্ত্রী দেলোয়ারা বেগম জলি।

এ ঘটনায় ঘিওর থানা পুলিশের তৎকালীন এসআই লুৎফর রহমান বাদী হয়ে একটি দুর্ঘটনাজনিত মামলা দায়ের করেন। পরে ডিবি ইন্সপেক্টর আশরাফ-উল ইসলাম মামলার তদন্ত করে চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের বাস চালক জামির হোসেনের বিরুদ্ধে ২৭৯,৩৩৭,৩৩৮(ক),৩০৪ ও ৪২৭ ধারায় আদালতে চার্জশিট দেন।

tarek
দুর্ঘটনার পর বাস চালক পালিয়ে গেলেও পরে মেহেরপুরে এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠিয়েছিলেন। সে সময় তার মুক্তির দাবিতে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল বিভিন্ন বাস মালিক ও শ্রমিক সংগঠন।পরে তিনি জামিনে মুক্ত হন। বর্তমানেও তিনি জামিনে রয়েছেন।

প্রায় পাঁচ বছর ধরে বিচার চলার পর আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে বুধবার। দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আল-মাহমুদ ফাইজুল কবীল গত রোববার রায়ের দিন নির্ধারণ করেন। একই সঙ্গে আসামির জামিন আদেশ বহাল রাখেন। এ মামলায় আসামি পক্ষের দুইজন সাফাই সাক্ষীসহ মোট ২৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত।

রাস্ট্রপক্ষের আইনজীবী মানিকগঞ্জ জজ কোর্টের এপিপি আফসারুল ইসলাম মনি জাগো নিউজকে জানান, চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের চালকের দোষেই ওই দিন দুর্ঘটনা ঘটে। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে ছিলেন তিনি। এছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির কাগজপত্রও ছিল মেয়াদ উত্তীর্ণ। তথ্য প্রমাণ ও সাক্ষীদের দ্বারা তারা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন চালকের দোষেই প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছিল। তাই তিনি প্রত্যাশা করেন রায়ে আসামির সবোর্চ্চ শাস্তিই হবে।

অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী মাধব সাহা জাগো নিউজকে জানান, বাসের নয়, মাইক্রোবাসের চালকের দোষেই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পরও বাসের অবস্থান বাম পাশেই ছিল। বরং ডানপাশ দিয়ে চলছিল মাইক্রোবাসটি। এছাড়া মাইক্রোবাস চালক ছিলেন অপেশাদার। রাস্তাও তার অচেনা ছিল। তাই তার ভুলের কারণেই এ দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তিনি মনে করেন চালক নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে বেকসুর খালাস পাবেন।

বাংলা চলচ্চিত্র আর সাংবাদিকতার দুই নক্ষত্রের অকাল মৃত্যুতে থমকে গিয়েছিল সাংস্কৃতিক অঙ্গন, সাংবাদিক সমাজসহ পুরো দেশ।নিরাপদ সড়কের দাবিতে সোচ্চার হয়েছিল বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। এ দুর্ঘটনার পর ঢাকা-আরিচা মহাসড়েকের ১১টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয় সরকার। যার কাজ শুরু হয়েছিল তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের দুর্ঘটনাস্থল থেকে। দুর্ঘটনাস্থলের পাশে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে একটি ছোট্ট স্মৃতি ফলক তৈরি করা হযেছে। যেখানে প্রতিবছর দিনটিকে স্মরণ করে শ্রদ্ধা জানান জেলার সাংবাদিক সমাজসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

বি.এম খোরশেদ/আরএআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।