তিস্তায় হঠাৎ পানি বৃদ্ধি : ১২ উপজেলায় পানি সরবরাহ
দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ এখন পানিতে টইটুম্বুর। শুক্রবার থেকে তিস্তা নদীতে ঢল নামতে শুরু করেছে। শুকিয়ে থাকা তিস্তায় হু-হু করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নব যৌবনে ফিরে পেয়েছে নদীটি। অথচ চলতি বছরের গত মার্চ মাসেও তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ গড়ে ছিল ১০০ কিউসেক।
গত বৃহস্পতিবার পানি প্রবাহ ১০০ কিউসেক থাকলেও শুক্রবার সকাল ৬টায় তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে উজানের পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। বেলা ৩টায় এটি বৃদ্ধি পেয়ে ৮শ কিউসেকে আসে। এরপর শনিবার সকালে পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার কিউসেকে এসে দাঁড়ায়। বর্তমানেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এদিকে পানি বৃদ্ধির পর পরই নীলফামারীসহ ৩টি জেলার ১২ উপজেলায় সেচ ক্যানেলে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
এদিকে তিস্তার ব্যারেজের সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকায় কৃষকরা ভরপুর পানি পেয়ে খুশীতে আত্মহারা হয়ে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত বছর এসময় তিস্তায় ২৫০ কিউসেক পানি পাওয়া গিয়েছিল।
তিস্তা পাড়ের ঝাড় শিঙ্গেরশ্বর চরের নৌকার মাঝি হারুন শেখ (৪০) জানায়, তিস্তা নদীতে যেন জোয়ার শুরু হয়েছে। এ জোয়ারে তিস্তা ফুলে ফেপে উঠছে। সেচ ক্যানেলের প্রধান খাল, শাখা খালে পানিতে ভরে গেছে।
শনিবার দুপুরে দেখা যায়, উজান থেকে তিস্তা নদী বাংলাদেশের প্রবেশ পথ নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের কালিগঞ্জ জিরো পয়েন্ট দিয়ে স্রোত ধারায় হু-হু করে পানি আসছে। যা দ্রুত প্রবাহে চলে যাচ্ছে ভাটির দিকে। গত কয়েক দিন আগেও নদীর বুকে যে ধু-ধু বালুচর দেখা গেছিল, তা যেন নিমিষেই নদীর পানিতে চাপা পড়ছে। পানিতে নদীর কূল কিনারা ভরে উঠছে ধীরে ধীরে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে তিস্তার পানি কমতে কমতে দাঁড়িয়ে ছিল ১০০ কিউসেকে। অথচ এ নদীতে স্বাভাবিকভাবে গড়ে পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার কিউসেক পানি থাকা প্রয়োজন। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে পানি কমতে শুরু করে। এ অবস্থা চলে ২ এপ্রিল পর্যন্ত। এদিকে হঠাৎ করে তিস্তার পানি হু-হু করে বৃদ্ধির বিষয়টি অবাক করে দিয়েছে তিস্তাপাড়ের মানুষজনকে।
তিস্তা পাড়ের আবুল কাশেম জানায়, তিস্তা নদীকে যখন দেখি শুকায় যায় তখন বুকটা খাঁ-খাঁ করে উঠে। এখন তিস্তা নদী দেখে খুব ভালো লাগছে।
তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুরুজ্জামান বলেন, পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বংপুরের গঙ্গাচড়া, দিনাজপুরের চিনিরবন্দরসহ বিভিন্ন উপজেলায় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, তিস্তার পানি নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ১২টি উপজেলার প্রায় ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। অথচ চলতি মৌসুমে শুধুমাত্র নীলফামারীর জেলার ৪টি উপজেলার ২৮ হাজার ৫শ হেক্টর বোরো চাষের টার্গেট করা হলেও পানি সল্পতার কারণে সেচ ক্যানেলের মাধ্যমে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া হয়।
এমএএস/আরআই