২০ লাখ টাকার জন্যই গৃহবধূ সিফাতকে হত্যা


প্রকাশিত: ০২:১৩ পিএম, ০২ এপ্রিল ২০১৫

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ওয়াহিদা সিফাত (২৭) পাঁচ বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন রাজশাহী নগরীর আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন রমজানের ছেলে মো. আসিফকে।

বেকার আসিফ ব্যবসা করার জন্য বাবার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে সিফাতকে চাপ দেয়। এতে সিফাত রাজি না হওয়ায় দিনের পর দিন তার ওপর চলতে থাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। আর শেষ পর্যন্ত এই যৌতুকের কারণেই সিফাতকে প্রাণ দিতে হয়েছে।

বৃহস্পতিবার নগরীর রাজপাড়া থানায় দায়ের করা মামলায় এমনই অভিযোগ করেছেন ওয়াহিদা সিফাতের চাচা মিজানুর রহমান খন্দকার। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/০৩) এর ১১(ক)/৩০ ধারায় যৌতুকের দাবিতে হত্যা ও সহায়তা করার অপরাধে দায়ের করা এই মামলায় সিফাতের স্বামী মো. আসিফসহ তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।

অন্য আসামিরা হলেন, সিফাতের শ্বশুর মোহাম্মদ হোসেন রমজান ও শাশুড়ি নাজমুন নাহার নাজলী।

গত ২৯ মার্চ রোববার রাত ৯টা ২৫ মিনিটে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয় গৃহবধূ ওয়াহিদা সিফাতকে। তার দেড় বছরে একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিফাতের সুরতহাল রিপোর্টে বলা হয়েছে, তার থুতনির নিচে এক ইঞ্চি পরিমাণ লালচে জখম ছিল। এছাড়া রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের দেয়া লাশের ময়নাতদন্ত রিপোর্টেও সিফাতের মাথায় জখমের প্রমাণ মিলেছে। সিফাতের গ্রামের বাড়ি রংপুর। তার বাবা আমিনুল ইসলাম খন্দকার বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক।

মামলায় সিফাতের চাচা মিজানুর রহমান খন্দকার অভিযোগ করেন, তার বড় ভাই আমিনুল ইসলাম খন্দকারের বড় মেয়ে ওয়াহিদা সিফাত এর সাথে পাঁচ বছর আগে রাজশাহী নগরীর মহিষবাথান এলাকার মোহাম্মদ হোসেন রমজানের ছেলে মো. আসিফের বিয়ে হয়।

বিয়ের পর থেকে সিফাত স্বামীসহ শ্বশুর ও শাশুড়ির সাথে একই বাড়িতে বসবাস করতেন। বেকার আসিফ ব্যবসা করার নাম করে যৌতুক হিসেবে ২০ লাখ টাকা তার বাবার কাছ থেকে এনে দিতে সিফাতকে চাপ দেয়। কিন্তু, সিফাত যৌতুক এনে দিতে অস্বীকার করলে আসিফ মাঝে মধ্যে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন ও মানসিকভাবে চাপ প্রয়োগ করতো। সিফাতের শ্বশুর-শাশুড়ি নির্যাতনের বিষয়টি জানলেও আসিফকে কোন বাধা দিতো না।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনকারী সিফাত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট গাজীপুরে চাকরির জন্য দরখাস্ত করেন এবং নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে ঢাকার পল্লবীতে তার বাবার বাসায় যাবার জন্য গত ২৯ মার্চ রাত ১১টা ২০ মিনিটে ধূমকেতু ট্রেনের টিকিট কাটেন।

হঠাৎ ওইদিন রাত সোয়া ১০টার দিকে সিফাতের ম্বশুর মোহাম্মদ হোসেন রমজান মোবাইল ফোনে সিফাতের ভাই আসিফুল ইসলামকে জানান, সিফাত মূমুর্ষূ অবস্থায় তার ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে। এর ৫ মিনিট পর রমজান আবারো মোবাইল ফোনে জানান, সিফাত গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে এবং তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সে মারা গেছে।

মামলায় সিফাতের চাচা মিজানুর রহমান খন্দকার অভিযোগ করেন, সিফাতের মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি মোহাম্মদ হোসেন রমজানকে রাত ১২টার দিকে ফোন দেন। ফোনে রমজান জানান, সিফাতকে তার স্বামী মাঝে মধ্যে মারপিট করতো। তিনি তা মিমাংসা করে দিতেন। বৃহস্পতিবারও মারপিট করেছে।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ৩০ মার্চ সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পরিবারের লোকজন ঢাকা থেকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আসেন। এসময় তারা দেখেন সিফাতের মৃতদেহের মাথা ও শরীরে বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন এবং নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়েছে। এছাড়া মাথার ডান দিকে চোখের পাশে রক্ত জমাট বাধা আছে।

মামলায় দাবি করা হয়, যৌতুরে জন্যই সিফাতকে হত্যা করা হয়েছে। এখন হত্যার ঘটনাকে আড়াল করতে আত্মহত্যা হিসেবে চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

যোগাযোগ করা হলে রাজপাড়া থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, গৃহবধূ ওয়াহিদা সিফাতের মৃত্যুর ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে থানায় মামলা হয়েছে। মামলা নং-২/১৫৯। এসআই শরিফুল ইসলামকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

ওসি জানান, সিফাতের মৃত্যুর পরদিন আটক তার স্বামী মো. আসিফকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হবে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

এমএএস/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।