মুখে মুখে মীরুর কুকীর্তি


প্রকাশিত: ০৭:২৭ এএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

দৈনিক সমকালের সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যায় অভিযুক্ত শাহজাদপুর পৌরসভার মেয়র হালিমুল হক মিরু ও তার দুই ভাই পিন্টু ও মিন্টু গ্রেফতার হওয়ার পর তাদের নানা অপকীর্তির কথা এখন সবার মুখে মুখে। এতদিন ভয়ে যারা মেয়র মীরুর বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস করেনি এখন তারা মুখ খুলতে শুরু করেছে অবলীলায়।

এলাকায় বোমাবাজি, গুলিবর্ষণ, লুটপাট, দখল, টেন্ডারবাজি, মারধরসহ তিন ভাইয়ের নানা অপকর্মের তথ্য উঠে এসেছে সাধারণ মানুষের কথায়। কয়েকদিন আগেও মীরুর যে বাড়ি ছিল সরগরম এখন যেন তা ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে।

মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই মীরু শাহজাদপুর পৌরসভার প্রায় শতকোটি টাকার কাজ নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে রীতিমতো বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। যাতে প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ মীরুর ‘সাম্রাজ্যে’ প্রবেশ করতে না পারেন। তার ভাই আর ক্যাডারদের সশস্ত্র মহড়া দেখে অভ্যস্ত শাহজাদপুরের মানুষ।

শুধু তা-ই নয়, মেয়র মিরু, তার ছোট দুই ভাই হাবিবুল হক মিন্টু ও হাসিনুল হক পিন্টু চলাফেরা করতেন ভাড়া করা সশস্ত্র লোকজন নিয়ে। জনশ্রুতি আছে পাবনা থেকে ভাড়া করা সর্বহারা দলের সদস্যদের হাতে ছিল তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব।

হালিমুল হক মীরু একাধারে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং শাহজাদপুর পৌরসভার মেয়র হওয়ায় তার ভাইদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে শাহজাদপুরবাসী। তাঁতসমৃদ্ধ শাহজাদপুর উপজেলায় অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার শুরু করেন মেয়র মীরু ও তার ভায়েরা।

তাঁতসমৃদ্ধ উপজেলায় বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের নানা অনুষ্ঠানের কথা বলে চাঁদাবাজি করতেন তার ভাই মিন্টু ও পিন্টু। তাদের কথা না শুনলে নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তাকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেয়াসহ নানা হুমকি ধামকি দেয়া হতাে। তাদের ভয়ে টু-শব্দ করার সাহস পেতো না সাধারণ মানুষ।

বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে, পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী হলেও শুরুতে দলের তৃণমূল থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন পৌর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ভিপি আব্দুর রহিম। পৌর নির্বাচনের সময় থেকে পিন্টু ও বিজয়ের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত হয়। ওই নির্বাচনে বিজয়ের দুলাভাই আব্দুর রহিম মেয়র মিরুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন।

এই বিরোধ তুঙ্গে ওঠে বিজয়দের বাড়ির সামনের রাস্তা মেরামত ও সংস্কার কাজ অসমাপ্ত রাখা নিয়ে। ওই রাস্তার কাজটি পান পিন্টু ও মিন্টুর অনুগত ঠিকাদাররা। অভিযোগ রয়েছে, ইচ্ছে করেই বিজয়দের বাড়ির সামনের রাস্তাটির সংস্কার কাজ অসমাপ্ত রাখা হয়।

২ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সকালে শাহজাদপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বিজয় মাহমুদ যাচ্ছিলেন মেয়রের বাড়ির পাশ দিয়ে। তাকে দেখামাত্র তুলে নিয় মারধর করেন পিন্টু ও মিন্টুসহ তার বাহিনীর সদস্যরা। এ ঘটনার জের ধরে ছাত্রলীগ ও স্থানীয়রা মেয়রের বাড়িতে মিছিল নিয়ে গেলে মেয়র তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মিছিলের উপর ককটেল ও গুলি নিক্ষেপ করায়।

এসময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালীন মেয়র হালিমুল হক মীরুর শটগানের গুলিতে গুরুতর আহত হন সাংবাদিক শিমুল। আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে বগুড়া ও পরে ঢাকা নেয়ার পথে শিমুল মারা যান। তার মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভে ফেটে পড়ে শাহজাদপুরবাসী।

এ ঘটনার দিন মেয়র মীরুর ভাই পিন্টু ও পরেরদিন মিন্টুকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও ব্যবহৃত শটগানটি উদ্ধার হয়নি। তবে  মেয়রের ব্যবহৃত শটগান ও বেশকিছু গুলি জব্দ করেছে পুলিশ। এ মামলার প্রধান আসামি মেয়র হালিমুল হক মিরুকে রোববার রাতে পুলিশ ঢাকার শ্যামলী এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে।

ইউসুফ দেওয়ান রাজু/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।