কুড়িগ্রামে সূর্যমুখীর বাম্পার ফলন


প্রকাশিত: ১১:২১ এএম, ৩১ মার্চ ২০১৫

কুড়িগ্রামে পতিত জমি আর দু’ফসলী জমিতে সুর্যমুখী চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন জেলার সাধারণ কৃষক। অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় অনেকেই এই চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তবে কৃষকদের এই সুর্যমুখী চাষে কিছুটা বাঁধ সেধেছে বাজারজাত প্রক্রিয়া।

সবুজ প্রকৃতির চারিদিকে মাথা উচু করে সূর্যের দিকে মুখ করে রয়েছে বড়-বড় হলুদিয়া ফুল। চোখ যেদিকে চায় যেন হলুদের চাদর বিছিয়ে রেখেছে  গ্রামের কোন নববধূ। হলুদ ফুলে ভোঁ-ভোঁ শব্দে মধু আহরণে ব্যস্ত সময় পার করছে মৌমাছিরা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সূর্যমুখীর চাষ হলেও আমাদের  দেশে তা অপ্রতুল।

শুধুমাত্র দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এর চাষ বেশি হয়ে থাকে। উত্তরের সীমান্ত ঘেঁষা ও দেশের ২য় নদীমাতৃক জেলা হিসেবে পরিচিত কুড়িগ্রাম। জেলায় চরাঞ্চল জমি রয়েছে ২৯ হাজার ৮শ ২৪ হেক্টর। এরমধ্যে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ২২ হাজার ৫শ ৪৯ হেক্টর। আর সাময়িকভাবে পতিত থাকে ৭ হাজার ৫শ ১ হেক্টর জমি। এবারই  প্রথম জেলায় সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে ৩০ হেক্টর জমিতে।

সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নে মাষ্টারের হাট গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম, বেলাল হোসেন, সহিবর রহমান, জসমত আলী জানান, তারা প্রত্যেকে এবারেই প্রথম ১ একর জমিতে সূর্যমূখী চাষ করেছেন। রবি মৌসুম শেষে অধিকাংশ জমিগুলো পতিত রাখা হয়। এতদিন সঠিক প্রশিক্ষণ আর অর্থাভাবে এই দু’ফসলী জমিকে তিন ফসলী জমিতে রূপান্তর করতে পারেনি এখানকার সাধারণ  কৃষক।

এবার কৃষি বিভাগের পরামর্শে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক এর উদ্যোগে তারা সূর্যমুখীর চাষ করেছে। একর প্রতি  সেচ,কীটনাশক, সার ইত্যাদি খরচ হয়েছে গড়ে ১৩ থেকে ১৬ হাজার টাকা। আর ফলন পাওয়া গেছে প্রতি একরে ৩০ থেকে ৩৩ মণ পর্যন্ত। যা বর্তমান বাজার দরে কৃষকের লাভ হবে প্রায় ৩৫ হতে ৪০ হাজার টাকার মতো। কিন্তু সূর্যমুখীর বাজারজাত প্রক্রিয়া নিয়ে চিন্তিত এখানকার কৃষক। সূর্যমুখীর চাষের ফলে একদিকে যেমন কৃষক দু’ফসলী জমিতে তিন ফসলী আবাদ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন আবার অন্যদিকে পরিবারের তেল, গরু এবং মাছের খাদ্য হিসেবে সূর্যমুখীর খৈল ব্যবহার করে বাড়তি লাভ পাচ্ছেন। কৃষকদের সঠিক প্রশিক্ষণ আর সামান্য কিছু অনুদান প্রদানের মাধ্যমে এখানকার কৃষকদের উৎসাহ তৈরি করছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি ব্র্যাক।

সূর্যমুখীর বীজে ৪০% থেকে ৪৫% পর্যন্ত তেল বিদ্যমান থাকে। যা অন্যান্য ভোজ্য তেলের তুলনায় স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে বপন করে ১শ` ১০ দিনের মাথায় কৃষক এর ফলন ঘরে তুলতে পারেন। সূর্যমুখীর বীজ হতে প্রতি মণে তেল উৎপাদন হয় ১৮ থেকে ২০ লিটার এবং এর বাজারজাত প্রক্রিয়া অন্যান্য ভোজ্য তেল বিশেষ করে সরিষা মাড়াই করে তেল সংরক্ষণের মতোই সুবিধা পাওয়া যায় বলে জানান কুড়িগ্রাম ব্র্যাকের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি জ্যেষ্ঠ উপজেলা ব্যবস্থাপক মোকাররম হোসেন।

কুড়িগ্রাম কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালাক শওকত আলী জানান, জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে ২টি উপজেলায় সূর্যমুখীর চাষ করেছে প্রায় দু’শতাধিক কৃষক। সদর উপজেলায় ২২ হেক্টর ও চিলমারী উপজেলায় ৮ হেক্টর জমিতে  সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সমন্বয় করে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য।

এমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।