চেয়ারম্যানের হাতে ধর্ষিত তরুণী, মামলা দেয়ায় হুমকি


প্রকাশিত: ০৩:৪৯ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০১৭

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ মজিবসহ চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করে বিপাকে পড়েছেন নির্যাতিতা নারী ও তার পরিবার।

নির্যাতিত পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, মামলা প্রত্যাহার করতে আসামি ও তাদের লোকজনের হুমকির মুখে আতঙ্কে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের।

এদিকে মঙ্গলবার সকালে দোষীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে জনতা ডিগ্রি কলেজের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীরা কলেজের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করে।

এতে কলেজের কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও এলাকার শতাধিক লোক অংশ নেয়। মামলার বাদী উপজেলার পূর্ব দিঘলী গ্রামের ওই তরুণী কলেজের কম্পিউটর অপারেটর।

আদালত সূত্র ও সংশ্লিষ্টরা জানায়, ওই তরুণীর সঙ্গে ২০০৩ সাল থেকে শেখ মজিবের প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছে। উভয় পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি জানেন। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের ৭ অক্টোবর বিকেলে তরুণীর বাড়িতে গিয়ে শেখ মজিব বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণ করেন।

এ সময় ওই বাড়িতে কেউ ছিলেন না। পরে মজিবকে বিয়ের কথা বললে, তিনি নির্বাচনে ইউপি চেয়ারম্যান বিজয়ী হলে বিয়ে করে ঘরে তুলে নেবেন। পরে শপথগ্রহণসহ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তিনি কালক্ষেপণ করেন।

গত ২৪ জানুয়ারি মজিব তার বাড়িতে লোক মারফত তরুণীকে বিয়ে করবে বলে খবর দেন। পরদিন সকালে কয়েক সাক্ষীকে তিনি ওই বাড়িতে গেলে তার (মজিব) পরিবারের সদস্যরা বিয়ের বিষয় নাকচ করে দেন।

এ সময় নির্যাতিতা দাবি করেন, তাকে বিয়ে না করলে তিনি বাড়ি ফিরবেন না। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মজিব, তার তিন ভাই কামাল খান, তৌহিদ খান ও দুলাল তার ওপর হামলা চালায়। এ সময় তাকে মজিব শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা চালায়।

একপর্যায়ে তাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম করা হয়। পরে তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী জেনালে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

এ ঘটনায় চন্দ্রগঞ্জ থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ অপারগতা প্রকাশ করে। পরে রোববার (২৯ জানুয়ারি) তরুণী বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে শেখ মজিবকে প্রধান করে তার তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত বিষয়টি জুডিশিয়াল তদন্ত করে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

তরুণীর বাবা ব্যবসায়ী নুরুল আমিন বলেন, মামলা দায়েরের পর থেকে আমরা চরম আতঙ্কে রয়েছি। বিভিন্ন লোক মারফতে আমাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। রোববার রাত ১১টায় একটি গ্রামীণ ফোন নম্বর থেকে আমার বাড়িতে ফোন করে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে।

নির্যাতিতা বলেন, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাকে ধর্ষণ করেছে শেখ মজিব। তাদের নির্যাতনের ক্ষত আমার শরীরে রয়েছে। নির্যাতনের যন্ত্রণায় আমি ঘুমাতে পারছি না। আদালতের আমি ন্যায় বিচার কামনা করছি।

বাদীর আইনজীবী ইফতেখার মাহমুদ ফয়সাল বলেন, আদালত বাদীর অভিযোগটি আমলে নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য বলেছেন। ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে দিঘলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মজিব মোবাইল ফোনে বলেন, একটি মহল আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে। পরিকল্পিতভাবে আমাকে হেয় করতে এ মামলা করিয়েছে। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা চলছে।

কাজল কায়েস/এএম/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।