ঝিনাইদহে ব্যস্ত হাতপাখার কারিগররা


প্রকাশিত: ১০:৫৮ এএম, ২৭ মার্চ ২০১৫

প্রচন্ড গরম বইতে শুরু করেছে সারাদেশে। গরমের তাপদাহে অতিষ্ঠ হচ্ছে ঝিনাইদহের  কালীগঞ্জের এলাকাবাসীও। আর এতে করে পাখা পল্লীর কারিগরদের  ব্যস্ততা বেড়েছে কয়েকগুণ। কেউ পাতা কেটে বড়-ছোট করছে, আবার কেউ সেলাই কাজ করছে, কেউবা সুতা ও বাঁশের শলাতে রং করছে। কাজের ব্যস্ততায় শরীর ঘেমে মাটিতে পড়লেও নিজেদের তৈরি তালপাখার বাতাস নেওয়ার সময় তাদের নেই। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের পাখা পল্লী খ্যাত দুলালমুন্দিয়া ও পারিয়াট গ্রামে বর্তমান  এ অবস্থা  বিরাজ করছে।

সরেজমিনে কথা হয় দুলালমুন্দিয়া গ্রামের মজনু, ফজলু, খালেক, নুর আলী, আব্দুল বারিক, চাঁনমিয়া, মোস্তফা ও আব্দুর রহিম এর সাথে। তারা জানায়, তাদের পূর্বপুরুষেরা এই পাখা তৈরীর কাজ করতেন। পূর্বপুরুষদের পেশা ধরে রাখার জন্য এখনো তারা পাখা তৈরির কাজ করে যাচ্ছেন।

কালীগঞ্জের দুলালমুন্দিয়ার ৫০ পরিবার ও পারিয়াট গ্রামের প্রায় ৩৩ পরিবার তালপাখা তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। জন্মগতভাবে এ পেশাকে পেয়ে থাকে বলেই তাদের ছেলেমেয়েরাও বিভিন্ন নকশার পাখা তৈরীতে পারদর্শী।

পাখা কারিগর মোস্তফা ও আব্দুর রহিম জানায়,  হাতপাখা তৈরীর প্রধান উপকরণ তাল পাতা এই এলাকাতে পাওয়া যায় না। শীত মৌসুমে ফরিদপুর ও মাগুরা জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে চারাগাছের পাতা কিনে আনেন তারা। তারপর পাতা রোদে শুকিয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখেন। পানি থেকে উঠিয়ে নরম ভেজা পাতা গোলাকার করে কেটে মাঝখান থেকে দু-খন্ড করেন। এরপর বোঝা বেঁধে পাতা ঘরে রেখে দেন এবং সেখান থেকে নিয়ে সারাবছর বাড়িতে  বসে তালপাখা তৈরী করেন। একটি তালপাতা থেকে দুটি তালপাখা তৈরী হয়।

তিনি আরও জানান, পুঁজি না থাকায় এবং অনেক দূর থেকে পাতা কেনার কারণে পরিবহনে অনেক বেশি খরচ পড়ে যায়। কারিগর মজনু মিয়া জানান, বছরে ২/৩ মাস তাল পাখার বেশি চাহিদা থাকে। চৈত্র থেকে শুরু করে জৈষ্ঠ্য মাস পর্যস্ত বিক্রির মৌসুম হলেও চৈত্র ও বৈশাখ মাসই পাখা বিক্রির উপযুক্ত সময়। প্রচন্ড- তাপদাহ ও বিদ্যুতের লোডশেডিং এ সময়টাতে বেশি হওয়ার কারণে তাল পাখার কাটতিও বেশি হয়ে থাকে। ফলে তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। বছরের অন্যান্য মাসে তালপাখার  তৈরীর কাজ ও বিক্রি চললেও শীত মৌসুমে পাখা বিক্রি থাকে বন্ধ। তাই তারা শীতের আগমনকে ভয় পায়।

তিনি জানান, পরিবারের ছোটরাও বাবা-মায়েদের ব্যস্ততা দেখে বসে থাকতে পারে না। পড়াশুনার পাশাপাশি পাখা তৈরীর বিভিন্ন কাজ করে তারা বড়দের সাহায্য করে।

নুর আলী নামের একজন কারিগর জানান, গত বছরগুলোর চেয়ে এবছর একটি পাখাতে দাম বেড়েছে প্রায় তিন টাকা। কিন্তু লাভ হচ্ছে কম। কারণ প্রতিটি জিনিসেরই দাম বেশি।

তিনি জানান, প্রতিটি পাখা তৈরি পর্যন্ত প্রায় আট থেকে ১০ টাকা খরচ হচ্ছে। বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১২ থেকে ১৫ টাকা টাকা। অবশ্য পাইকার ব্যবসায়ীরা উপরোক্ত দামে পাখাগুলি তাদের কাছ থেকে নিয়ে যায়। তারা একটি পাখা ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করে। অবশ্য খুব গরমের মধ্যে হাতপাখার চাহিদা বেশি হওয়ায় সে সময় একটি পাখা তারা ২৫ থেকে ৩০ টাকা বিক্রি করে। একজন কারিগর প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ টি তালপাখা তৈরী করতে পারেন। ফলে প্রতিটি কারিগর বিক্রির মৌসুমে দিনে যাবতীয় খরচবাদে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা আয় করতে পারেন। পাইকাররা এখন বাড়ি থেকেই পাখা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে পরিবহন খরচ থেকে রেহাই পাচ্ছেন।

জোছনা নামের এক গৃহবধু জানান,পাতা দিয়ে পাখা তৈরী করে, শরীর ঘেমে মাটিতে পড়লেও বাতাস নেওয়ার সময় তাদের হয় না। কারণ রান্নাবান্না ও গৃহস্থলীর কাজের পাশাপাশি তাদেরকে পাখা তৈরীর কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়।

অমেলা বেগম নামের বৃদ্ধা মহিলা বলেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে তিনি পাখা তৈরীর কাজ করছেন। বাড়ির বৌদেরকেও পাখা তৈরীর কাজ শিখিয়েছেন। ফলে তার ব্যস্ততা এখন একটু কমেছে।

এসএইচএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।