শিশুদের মৃত্যু ফাঁদ ৩২টি বিদ্যালয়
জয়পুরহাটের ৫ টি উপজেলার কমপক্ষে ৩২ টি ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান চলছে শিশুদের মৃত্যু ফাঁদ হয়ে। একই কারণে এসব ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমেছে আশঙ্কাজনকভাবে। তারপরও এসব বিদ্যালয়গুলো সংস্কারে বা পুনঃনির্মাণে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জয়পুরহাটের এসব বিদ্যালয়ের দৃশ্য একটি বা দুইটি নয়, কমপক্ষে ৩২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এমনই ঝুঁকিপূর্ণ।
কোন বিদ্যালয়ের ছাদ ভেঙ্গে খসে পরে বের হয়েছে রড, কোনটির আবার দেখা দিয়েছে ফাটল। ব্যবহারের অনুপযোগী এসব ভবনের কক্ষেই পাঠদান চলে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে। এতে শিশুদের কচি মনেও দেখা গেছে শঙ্কার ছাপ।
ঝুকিপূর্ণ বিদ্যালগুলো হলো- জয়পুরহাট সদর উপজেলার তেতুলিয়া আজিজিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মদন মোহনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
পাঁচবিবি উপজেলার মধ্যে মৃধাপাড়া, আয়মা রসুলপুর, হাবিবপুর, রামতনু, ভুইডোবা, জাম্বুবান ও শিরট্রি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।
কালাই উপজেলার কাশিপুর, শিব সমুদ্র, কাথাইল গোপিনাথপুর, থুপসাড়া, গংগাদাসপুর, মাত্রাই, মধূবন ও চাকলমুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।
ক্ষেতলাল উপজেলার বিদ্যালয়গুলো হলো-পাঠানপাড়া, কৃষ্ণ নগর, সমন্তাহার, আলমপুর, নওটিকা কেশুরতা, শাখারুঞ্জ চৌধুরীপাড়া, হোপপির হাট, মামুদপুর, মহব্বতপুর ও গণমঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
আক্কেলপুর উপজেলার মধ্যে পুনঘর দিঘী, সোনামুখী, আক্কেলপুর, লক্ষ্মিভাটা ও তেমারিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
শিক্ষার্থী মীর নাসরুল্লাহ, মোহসিন আলী, ফারজানা আক্তার, মোবাশ্বিরাসহ অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এসব ঝুকিপূর্ণ বিদ্যালয়ে ক্লাস করতে গিয়ে তারা সব সময় ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। ভবন ধ্বসের ভয়ে অধিকাংশ সময় তারা লেখা-পড়ায় মনোযোগ দিতে পারছে না।
ইতোমধ্যেই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কর্তৃপক্ষ অধিক ঝুকিপূর্ণ জেলার ৭টি বিদ্যালয়কে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে। পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা বিদ্যালয়গুলো হলো কড়িয়া, দিবাকরপুর, থল ধুনট ও রামশালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এছাড়া কিছু কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয় টিন শেড হলেও মেয়াদ পার হয়েছে অনেক আগে। সংস্কার বা পুনঃনির্মাণের অভাবে টিনশেডের কক্ষগুলো জরাজীর্ণ হয়ে তা হয়ে পড়েছে ব্যবহারের অনুপযোগী। একটু ঝড়-বৃষ্টিতে ভিজে যায় শিক্ষার্থীসহ তাদের বই-পুস্তক। সেই সাথে একটু ঝড়ো-হাওয়াই উড়ে যেতে চায় স্কুল ঘরগুলো। ভয়ে কেঁপে উঠে কচি শিক্ষার্থীদের প্রাণ। যেকোন সময় ঘটতে পারে বড় রকমের কোন দুর্ঘটনা। ফলে সঙ্গত কারণে উপস্থিতি কমেছে আশঙ্কাজনকভাবে।
এ ব্যাপারে নানা অভিযোগ জানালেন শিক্ষকরা। জয়পুরহাট সদরের মদন মোহনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মীর মাহবুব হোসেন জানান, ৪২৬ জন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে প্রতিনিয়ত পাঠদান করছি। এ বিদ্যালয়ের মোট ৪টি কক্ষের মধ্যে ৩টিই ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় প্রায় সময় খোলা আকাশের নিচে তাদের শিক্ষা দিতে হয়।
এদিকে এ সব সমস্যা অকপটেই স্বীকার করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বদরুজ্জোহা বলেন, এসব ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের ভবনগুলো অবিলম্বে সংস্কার করে লেখাপড়ার পরিবেশ ফিরে আনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে।
এমজেড/এমএস