বলা হলো না কিছুই


প্রকাশিত: ০৩:৩৮ এএম, ২৯ জানুয়ারি ২০১৭

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার পাটগাতী গ্রামের ভ্যানচালক ইমাম শেখ (১৭)। এখন তার কাছে ভ্যানচালক পরিচয়টাই অনেক গৌরবের। কারণ তার ভ্যানে চড়েই গ্রাম ঘুরেছেন প্রধানমন্ত্রী।
 
ইমাম শেখ কল্পনাই করতে পারেনি এমন একটি মাহেন্দ্রক্ষণ তার জীবনে আসবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে এত কাছে পেয়েও মনের কথা বলতে না পেরে আফসোস তার।
 
মুঠোফোনে ইমাম শেখ জাগো নিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে আমি আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলাম। ভুলে গিয়েছিলাম আমার দারিদ্রের কথা। আমার সব কষ্টের কথা। আনন্দে বুক ভরে গিয়েছিল। আবেগে এতাটাই আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম যে প্রধানমন্ত্রীকে বলতে পারিনি আমার দুঃখের কথা-আমার কষ্টের কথা। আমার পরিবারের অভাব অনটন ও টানপোড়েনের কথা। শুনাতে পারিনি দারিদ্রের সঙ্গে আমার জীবনযুদ্ধের গল্প। এই আমার আফসোস।

টুঙ্গিপাড়ার পাটগাতী সরদার পাড়ার দরিদ্র লতিফ শেখের ছেলে ইমাম শেখ। জীবনযুদ্ধে অদম্য ইমামের দরিদ্র্যের কষাঘাতের কারণে ঠিকমতো স্কুলে যাওয়া হয়নি। দেড় বছর ধরে ভ্যান চালান। আর তার উপার্জনেই কোনোরকমে সংসার চলে। পরিবারে তার আরো দুই ভাই ও ৩ বোন রয়েছে। তারাও তেমন কিছুই করেন না।

ইমামের ইচ্ছে ছিল প্রধানমন্ত্রীকে তার সংসারের অভাব অনটনের কথা বলবেন। কিন্তু তার সব ইচ্ছে অব্যক্তই থেকে গেল। প্রধানমন্ত্রীকে তার ভ্যানে চড়িয়ে সে আবেগে এতটাই আপ্লুত হয়ে গিয়েছিল যে, তার সব দুঃখ কষ্ট ভুলে গিয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী তাকে খুশি হয়ে বকশিস দিয়েছিলেন। এটাও সে নিতে চায়নি। তারপরও প্রধানমন্ত্রীর সিকিউরিটি জোর করে পকেটে ঢুকিয়ে দেন ওই টাকা। এতে সে কষ্টই পেয়েছে বটে।

তার কথা, আমাগের বোনরে নিয়ে ভ্যানে ঘুরাইছি, এইতো আমার মহা আনন্দ। আমি টাকা নেব ক্যানে?

ইমাম খেদ প্রকাশ করে বলেন, আমরা গরীব মানুষ। আমাদের দুঃখ কষ্টের কথা কেউ শোনে না। সারা জীবন ভাবতাম একটি চাকরির জোগাড় হলে আর ভ্যান চালাবো না। ছোট কাজ করলে, সবাই ছোট চোঁখে দেখে। একটি চাকরি পেলে সংসারে আর দুঃখ কষ্ট থাকতো না। আল্লাহ আমার কথা শুনেছেন। আমার বুকটা ভরে গেছে। আমি না চাইতেই অনেক কিছু পেয়েছি। আল্লাহ তারে (প্রধানমন্ত্রী) হায়াৎ দারাজ করুন। তিনি যাতে দীর্ঘজীবী হন এবং দীর্ঘকাল সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে পারেন এই আমার প্রার্থনা।

উল্লেখ্য, গোপালগঞ্জে ১১-তম জাতীয় রোভার মুটের উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী বিকেলে টুঙ্গিপাড়ায় যান এবং সেখানে রাত্রি যাপন করেন। শুক্রবার সকালে তিনি ভ্যানে চড়ে টুঙ্গিপাড়া গ্রাম ঘুরে দেখেন, ফিরে যান শৈশবের স্মৃতিতে। এসময় তার ভ্যানচালক ছিলেন ইমাম শেখ।

হুমায়ূন কবীর/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।