রাজশাহী থেকে কার্গো বিমান উড়ালে অনিশ্চয়তা


প্রকাশিত: ০৬:১১ এএম, ২৮ জানুয়ারি ২০১৭

রাজশাহীবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি রাজশাহীর শাহ্ মখদুম বিমানবন্দর থেকে উড়ুক কার্গো বিমান। এতে রাজশাহীতে উৎপাদিত কৃষিপণ্য পৌঁছে যাবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। বিমানবন্দরটি এতোদিন এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে না পারলেও কার্গোর হাতধরে হয়ে উঠবে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের হিসেবে, রাজশাহীর শাহ্ মখদুম বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ফুট এবং প্রস্থ ৯২ ফুট। এ বিমানবন্দর অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার সক্ষমতার দিক দিয়ে চতুর্থ শ্রেণিভুক্ত। আর এতেই কার্গো বিমানসহ সুপরিসর বিমান ওঠানামা অসম্ভব। সুপরিসর বিমান ওঠানামার জন্য অন্তত ১০ হাজার ফুট দৈর্ঘ্যরে রানওয়ে হতে হবে।

তবে এ রানওয়েতে অভ্যন্তরীন রুটের মতই ছোট পরিসরে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল সম্ভব। আর এ জন্য শুধু বিমানবন্দর ভবনটির সম্প্রসারণ করলেই চলবে। সেটি মাথায় রেখে বিমানবন্দর ভবন সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ২০২০ সালের মধ্যেই এ কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা। ফলে এতোদিন লোকসানে থাকা রাজশাহীর বিমানবন্দরটি মুখ দেখবে লাভের।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, এখনো লোকসানে রয়েছে রাজশাহী বিমানবন্দর। বিমানবন্দরের বার্ষিক লোকসানের পরিমাণ জানাতে না চাইলেও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সারা বছরের আয় দিয়ে বিমানবন্দর পরিচালনার এক মাসের খরচাও মেটানো সম্ভব নয়। তবে এটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবেই চলছে এখনো। তবে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত হলে এটি লাভজনক হয়ে উঠবে।

সূত্র মতে, ১৯৮৪ সালের ১ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত অভ্যন্তরীন এ বিমানবন্দরে দুই দশক ধরে ফ্লাইট ওঠানামা করে। ২০০৬ সালের মঝামাঝি সময় পর্যন্তও এ বিমানবন্দর ছিল লাভজনক। কিন্তু ধীরে ধীরে যাত্রী সংখ্যা কমে যাওয়ায় ভারি হতে থাকে লোকসানের পাল্লা। লোকসান ঠেকাতে তাই ২০০৭ সালের ২০ জানুয়ারি যাত্রীবাহী বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ বিমান।

পরে ২০১৫ সালের ৭ এপ্রিল আবারো চালু হয় বিমানের উড়াল। এর আগে জিএমজি এয়ারলাইন্স ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ রাজশাহী থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করলেও লোকসানের কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়।

সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল রাজশাহী থেকে ফ্লাইট চালু করে নভোএয়ার। এ বছরের ১ জানুয়ারি তা বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। যাত্রী সংকট নয় বরং দুটি আন্তর্জাতিক ও একটি অভ্যন্তরীণ রুট বাড়ায় রাজশাহী রুটটি আপাতত বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন নভোএয়ারের রাজশাহীর কমার্সিয়াল ম্যানেজার সাব্বির হোসেন।

তিনি বলেন, নভোএয়ার এসে রাজশাহী-ঢাকা রুটে বিমান যাত্রী বাড়িয়েছে। সাশ্রয়ী হওয়ায় এখন অনেকেই বিমানে চাপছেন। তবে আপাতত নভোএয়ার বন্ধ থাকায় অন্য বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলো সেবার মূল্য বাড়িয়েছে। খুব শিগগিরই এ রুটে ফেরার কথাও জানান তিনি।

রাজশাহী শাহ মখদুম বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, রোববার, মঙ্গলবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সপ্তাহে এ চারদিন ঢাকা-রাজশাহী-ঢাকা ফ্লাইট পরিচালনা করছে বাংলাদেশ বিমান। এছাড়া শনিবার, সোমবার ও বুধবার এ তিনদিন একই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস বাংলা এয়ার। বিমানবন্দরে এখন প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৪০ জন যাত্রী ওঠানামা করে। ভাড়া বাড়লেও বর্তমানে যাত্রীর চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। তবে ওই দিনগুলো বাদে বিমানবন্দরে সুনসান নিরবতা বিরাজ করে।

Rajshahi

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অভ্যন্তরীন রুটের বিমান রানওয়েতে অবতরণ করলে আয় হয় তিন হাজার টাকা। আর বিমানবন্দরের ভয়েস ওভার প্রটোকল (ভিওআর) এর উপর দিয়ে বড় বিমান উড়ে গেলে বিমানবন্দর পায় ১৮ হাজার টাকা। এছাড়া ফ্লাইং একাডেমির প্রশিক্ষণ বিমান প্রতিবার ওঠানামার জন্য পাওয়া যায় ২৬ টাকা করে। প্রতিদিন  অন্তত ৩০টি প্রশিক্ষণ বিমানের ফ্লাইট রানওয়েতে অবতরণ করে।

তবে আয়ের এসব অর্থ সরাসরি হাতে পায় না রাজশাহী বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। শুধুমাত্র বিমানবন্দরের কৃষিজমি ও পুকুর ইজারার অর্থ সরাসরি আসে হাতে। বিমানবন্দরের ২৭ একর কৃষিজমি বছরে আট লাখ টাকায়  এবং ছয় লাখ টাকায় তিনটি পুকুর ইজারা দেয়া হয়।

অন্যদিকে, বিমানবন্দরে রয়েছে জনবল সংকট। অনুমোদিত ৬৬ জনবলের জায়গায় কর্মরত আছেন ৩০জন। এর মধ্যে ২০ জনই সংযুক্ত। ফলে কার্যক্রম চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মীরা। বিষয়টি স্বীকার করে জলবল নিয়োগের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানান এখানকার ব্যবস্থাপক।

রাজশাহী শাহ্ মখদুম বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সেতাফুর রহমান  জাগো নিউজকে জানান, এ অঞ্চল থেকে ভারতের কলকাতায় বিপুল সংখ্যক লোক যায় চিকিৎসার জন্য। এছাড়া পর্যটকরা যান পার্শ্ববর্তী নেপালে। এ কথা মাথায় রেখে সপ্তাহে অন্তত দুইটি করে কলকাতা ও কাঠমান্ডুগামী আন্তর্জতাকি ফ্লাইট চালু করা যেতে পারে। বিষয়টি তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। এনিয়ে কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়েছে। তবে রানওয়ে সম্প্রসারণ ছাড়া কার্গো বিমানসহ সুপরিসর বিমান চলাচল সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান মনি জাগো নিউজকে জানান, শুরু থেকেই তারা বিভিন্ন মহলে দাবি জানিয়ে আসছেন, রাজশাহী থেকে কৃষিপণ্য পরিবহনে কার্গো বিমান চালুর। সপ্তাহে অন্তত দুটি কার্গো বিমান চলাচল করলে এখানকার অনেক পণ্য দ্রুত বিদেশে রফতানি সম্ভব হবে। এতে ব্যবসায়ী ও কৃষক উভয়ে লাভবান হবেন। এ অঞ্চলের অর্থনীতির গতি দ্রুতই পাল্টাবে।

রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল হান্নান জাগো নিউজকে জানান, রাজশাহীবাসীর পক্ষ থেকে ওঠা জোরালো দাবিগুলোর মধ্যে প্রথমটিই রাজশাহী বিমানবন্দর থেকে কার্গো বিমান চালু। এ দাবি তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে পৌঁছে দিয়েছেন। এটির বাস্তবায়ন করা গেলে রাজশাহীর দৃশ্যমান উন্নয়ন হবে।

রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা জাগো নিউজকে জানান, তিনি বরাবরই দাবি জানিয়েছেন রাজশাহী থেকে কার্গো বিমান চালুর। এটি রাজশাহীবাসীর প্রাণের দাবি। এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন হলে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে।

রাজশাহী বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত বছরই রাজশাহী থেকে হজযাত্রার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মন্ত্রণালয়। কিন্তু রানওয়ে স্বল্পতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। মাঝারি পরিসরে বিমান ওঠানামার জন্য বর্তমান রানওয়ের সামনের অংশে এক হাজার ফিট এবং পেছনের অংশ তিন হাজার ফিট বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ওই প্রস্তাবে মন্ত্রণালয় সম্মতিও জানিয়েছে বলে জানান ফজলে হোসেন বাদশা।

আরএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।